পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় ক্ষেত থেকে চাষীরা তরমুজ বিক্রী করছেন পিস হিসেবে সেই তরমুজ সাধারণ ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে কেজি হিসেবে। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে তরমুজের দাম। যে তরমুজ ৬ থেকে ৭শো টাকায় কিনে খাচ্ছেন সাধারন ক্রেতারা, সেই তরমুজই পাইকাররা কৃষকের কাছ থেকে কিনছে মাত্র ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়। দু/তিন হাত ঘুরে বাজার পর্যন্ত আসতে এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে আরো ৫ থেকে সাড়ে ৬শো টাকা। যার খেসারত দিচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে কলাপাড়া-কুয়াকাটা উৎপাদিত তরমুজের বেশ সুনাম রয়েছে। এ বছর জেলার কলাপাড়ায় মোট ১৩২৩ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। প্রায় সবগুলি ক্ষেতের তরমুজই পিস হিসেবে অথবা ক্ষেত অনুযায়ী বিক্রি হয়েছে।

কুয়াকাটার খাজুরা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ রাসেল আকন এবার প্রায় ১৮ একর (১ একর = ১০০ শতক) জমিতে তরমুজের চাষ করেছেন। ১৮ একর জায়গায় তাদের তরমুজ চাষে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছে।এখন অবধি প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পেরেছেন তারা। কৃষক রাসেল বলেন,আমরা কেজি হিসেবে তরমুজ বিক্রি করিনা।৩ থেকে ৫ কেজি ওজনের তরমুজগুলি আমরা প্রতি ১০০ পিস ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করি। সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় একদম বড় সাইজের তরমুজগুলি বিক্রি করি আমরা।

কুয়াকাটার আরেক তরমুজ চাষি বেলাল হোসেন বলেন, আমরা তরমুজ কেজি হিসেবে বিক্রি করিনা৷আমরা ক্ষেত থেকে পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি করি শহরে গিয়ে কিভাবে সেটা কেজি হিসেব হয়ে যায় আমরা জানিনা। আমরা কৃষকরা গরিব আছি গরিবই থেকে যাবো। ক্ষেত থেকে বাজার পর্যন্ত আসতে একটা তরমুজে ৪থেকে সাড়ে ৪শো টাকা বা তারও বেশি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। অথচ কৃষকরা রোদে পুড়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করার পরও কাংখিত লাভবান হতে পারছেন না।

মৎস্য বন্দর আলীপুরের কৃষক মনির হোসেন এবছর ২৫ একর জমিতে তরমুজের চাষ করেছেন।তিনিও পিস হিসেবে সম্পূর্ণ ক্ষেত বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রায় ৩০ লাখ টাকার মতো খরচ করে সম্পূর্ণ ক্ষেত বিক্রি করেছেন ৩৩ লক্ষ টাকায়।

তরমুজের পাইকার মো. সজীব যিনি ক্ষেত থেকে তরমুজ কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে নিয়ে যায় তিনি বলেন, তারাও মোকামে নিয়ে পিস হিসেবেই বিক্রি করেন তরমুজ। কি কারনে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করা হয় সে তথ্য জানা নেই তার। তিনি আরও জানান, মৌসুমের শুরুতে তরমুজের দাম বেশি ছিলো এবং তারা তরমুজ কিনে অল্প কিছু লাভ করতে পেরেছেন। বর্তমানে সারাদেশের তরমুজ বাজারে আসতে শুরু করেছে যার কারনে তরমুজের দামও একটু কমেছে এবং সামনে আরও দাম কমবে বলে জানান তিনি।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন বলেন, উপযুক্ত আবহাওয়া ও বালু মিশ্রিত মাটি হওয়ায় লালুয়া, কুয়াকাটা, মিঠাগঞ্জ, বালিয়াতলী, চম্পাপুর ও নীলগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৪২,৪০০ মেট্রিকটন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে। কেজিতে নাকি পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ক্ষেত থেকে কৃষকরা পিস হিসেবেই তরমুজ বিক্রি করছেন, তবে বাজারে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে এখানে আসলে আমাদের কিছু করার নেই, আমাদের কাছে আইনি ক্ষমতা নেই।