গোটা পৃথিবীর মতো করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সফলতার মুখ দেখেছে বাংলাদেশও। তবে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দেশ আক্রান্ত হচ্ছে ভয়ংকর এডিস মশার ছোবলে।  প্রতিদিন সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে হাজারো রোগী। সরকারও ডেঙ্গু ঠেকাতে নিচ্ছে নানামুখী ব্যবস্থা। তবুও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না ভয়ংকর ‌‘এডিস অ্যাটাক’। তবে কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এটি এখন বৈশ্বিক সমস্যা। সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতনতাই পারে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে।

২০১৯ সালের প্রথম ৫ মাসে সারাদেশে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩২৪ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। ২০২০ সালের প্রথম ৫ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩০৬ জন। আর ২০২১ সালের প্রথম ৫ মাসে ১০০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ২০২২ সালের প্রথম ৫ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩৫২ জন। এই সময়ে কেউ ডেঙ্গুতে মারা যাননি।

তবে ২০২৩ সালে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। চলতিবছরে ১৭ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ২২ হাজার ৪৬৭ জনকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। আর ১৮ জুলাই পর্যন্ত মারা গেছেন ১২৭ জন। তবে ডেঙ্গু সংক্রমণ শুধুমাত্র বাংলাদেশেই হচ্ছে না। এটি এখন বিশ্বের অনেক দেশের ‘স্থানীয়’ রোগে পরিণত হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, চলতি বছর ব্রাজিল, বলিভিয়া, পেরু, আর্জেন্টিনায় লক্ষাধিক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। আর এশিয়ায় মালয়েশিয়া, ফিলিপিন, শ্রীলঙ্কায়ও আক্রান্তের সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। ২০০০ সাল থেকে বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু রোগীর বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ গুণ। বর্তমানে ১০০টিরও বেশি দেশে এই রোগটি এখন স্থানীয়; যার ৭০ শতাংশ এশিয়ায়। তবে বিশ্বব্যাপী ৩৯০ মিলিয়ন লোক এ রোগের ঝুঁকিতে আছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, আমরা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, এডিস মশার ঘনত্ব, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এই কয়েকটি বিষয় নিয়ে মাল্টিভেরিয়েট অ্যানালাইসিস করে ফোরকাস্টিং মডেল তৈরি করি, যার মাধ্যমে ডেঙ্গু সম্বন্ধে আগাম ধারণা দিতে পারি। আমি আগেই বলেছিলাম ২০২৩ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হবে। শুধুমাত্র ঢাকায় নয়, দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়বে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে।

তিনি আরো বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ডেঙ্গুর বাহক ‌‘এডিস মশা’ করোনাভাইরাসের মতো পরিবর্তিত পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছে। আর বাংলাদেশে এর সংক্রমণ বাড়ার অন্যতম কারণ হলো জনসংখ্যার ঘনত্ব, মানুষের যাতায়াত, ব্যবহারযোগ্য পানির স্বল্পতা, প্যাকেটজাত খাবার ও বোতল জাত পানীয়ের বর্জ্য, বিভিন্ন পাত্রে পানি সংরক্ষণ রাখা। তবে এসব বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি জনগণেরও সচেতন হতে হবে। তাহলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নেয়া সম্ভব।