ভালোবাসা যে শুধু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তা আবারও প্রমাণ করলেন পটুয়াখালির বাউফলের নূরাইনপুরের হেমায়েত উদ্দিন। অবমুক্তির তিন দিন পর তার লালন-পালন করা বকটি ফিরে এসেছে প্রিয় মানুষের কাছে। এই ফিরে আসা যেন এক বন্য প্রাণীর নয়, ভালোবাসা ও মমতার এক অসাধারণ প্রতিচ্ছবি।
গত ২৭ অক্টোবর বিকেলে বন বিভাগ বাউফল উপজেলার নূরাইনপুর বাজারে ‘বকের বাড়ি’ নামে পরিচিত হেমায়েত উদ্দিনের পোষ্য বকটিকে অবমুক্ত করে। মুক্তির পর থেকেই বকটি কিছু না খেয়ে নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে। অবশেষে তিন দিন পর, বুধবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নিজে নিজেই উড়ে ফিরে আসে হেমায়েতের দোকানে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, সেই বকটি এখন আগের মতোই হেমায়েতের পাশে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয়দের ভাষায়, বকটি যেন তার প্রিয় মানুষটিকে চিনেই ফিরে এসেছে। এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে এখন এক অন্যরকম উচ্ছ্বাস ও আবেগ কাজ করছে।
চার মাস আগে ঝড়ের রাতে হেমায়েতের দোকানের পাশে একটি বকের ছানা পড়ে গিয়েছিল। তখন একটি গুইসাপ সেটিকে আক্রমণ করলে হেমায়েত ছানাটিকে উদ্ধার করে নিজের সন্তানের মতো যত্নে লালন-পালন করেন। সেই থেকেই বকটি হেমায়েতের দোকানের স্থায়ী সঙ্গী হয়ে ওঠে।
হেমায়েত উদ্দিন বলেন, “বকটি মুক্তির পর তিন দিন কিছু না খেয়ে খুব দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। এখন ধীরে ধীরে আগের মতোই খাবার খাচ্ছে, তবে আগের মতো দোকানের সামনে পাহারায় দাঁড়ায় না—সম্ভবত কিছুটা ভয় পেয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ও এখনো শিকার শেখেনি। তাই যতদিন না নিজে খাবার সংগ্রহ করতে পারে, ততদিন আমি নিজের দায়িত্বেই রাখব।”
বাউফল উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান খান জানান, “বকটি যেহেতু হেমায়েতের কাছ থেকে দূরে যাচ্ছে না এবং বাইরে থেকেও খাবার নিচ্ছে না, তাই আপাতত ওর সঙ্গেই থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শিকার শেখার পর স্বাভাবিকভাবেই একসময় বন্য পরিবেশে ফিরে যাবে।”
মানুষের ভালোবাসায় পোষ মানা এই বকটি এখন নূরাইনপুরের মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। যেখানে মানুষ মানুষকে ভুলে যায়, সেখানে এক বন্য পাখির তার প্রিয় মানুষকে চিনে ফিরে আসা সত্যিই ভালোবাসা আর মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
মন্তব্য করুন