কলাপাড়ায় বিআরডিবির পরিত্যক্ত ভবনের সংস্কার কাজ ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে, এ যেনো সরকারী মাল – দরিয়ামে ঢাল, সত্য হলো এ প্রবাদটি। আশির দশকে নি¤œমানের উপকরন দিয়ে ত্রুটিযুক্ত ওই ভবন নির্মানের পর একাংশ দেবে গিয়ে পুরো ভবনটি হেলে পড়ে। এ ঘটনায় চাকুরীচ্যুত হন বিআরডিবির তৎকালীন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও হিসাব বিভাগের এক কর্মকর্তা। পরে হাইড্রোলিক জগ দিয়ে ভবনটিকে দাড় করালেও হেলে থাকে ভবনটি। আর সেই অবস্থায় ব্যবহার শুরু করা হয় ভবনটিতে। এরপর ১০/১৫ বছরের মধ্যেই টিনের চাল থেকে পানি পড়ে মেঝেতে পানি জমা শুরু হয়। দেয়ালে জন্মায় শ্যাওলা, পরগাছা ।

ভবনের ভেতর বাহিরের পলেস্তারা খসে পড়ে। লেনটিন থেকে রড বেড়িয়ে মরিচা জমে একসময় খসে পড়া শুরু করে। এতে নষ্ট হতে থাকে অফিসের গুরুত্বপূর্ন কাগজপত্র। এরপর দুদফা সংস্কারের নামে সরকারী অর্থ গচ্চা দিয়েও ভবনটি ব্যবহার করা যায়নি শেষ পর্যন্ত। সেই পরিত্যক্ত বিআরডিবি ভবনে চলছে এবার ২৫ লক্ষ টাকার সংস্কার কাজ।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকার পর অলোচিত ৭ কক্ষ বিশিষ্ট সেই পরিত্যক্ত বিআরডিবি ভবনে অনুমোদন হয়েছে ফের ২৫ লক্ষ টাকার সংস্কার কাজ। যা ইতোমধ্যে শুরু করা হয়েছে। তবে নিযুক্তীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি নিজেরা সংস্কার কাজ পরিচালনা না করে উপ-ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছে। তারাও আবার নিজেরা করছে না। কাজ তদারকি করছে স্থানীয় বিআরডিবি চেয়ারম্যান আ: রাজ্জাক তালুকদার। যা নিয়ে অফিস পাড়ায় চলছে কানাঘুষা।

আশির দশকে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের শাসনামলে টিএনও কম্পাউন্ডে নির্মান করা হয় ৯০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৫ফুট প্রস্থের বিআরডিবি ভবন। নি¤œ মানের উপকরন ব্যবহার ও তদারকির অভাবে নির্মানের শুরুতে এটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এরপর সাবেক বিআরডিবির চেয়ারম্যান খালেক সিকদার এটিকে দুবার সংস্কার করে সরকারী টাকা গচ্চা দিয়ে লাভবান হলেও ব্যবহার উপযোগী হয়নি ভবনটি। এবার ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সেই বিআরডিবির ভবন সংস্কার কাজের ঠিকাদার নিযুক্তি লাভ করে গোপাল গঞ্জের গাজী আজাদ এন্ড কোং লি:।

সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার অনুপযোগী ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষনায় উপজেলা প্রশাসনের গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সুপারিশ পত্র অগ্রগামী করে জেলা প্রশাসনের কাছে প্রেরন করেন সাবেক ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিত্যক্ত বিআরডিবি ভবনের সংস্কার কাজ করার অনুমতি দেয়নি ইউএনও আবু হাসনাত ও শংকর চন্দ্র বৈদ্যর নেতৃত্বাধীন উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে আলোচিত ভবনের সংস্কার কাজের নিযুক্তীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আজাদ এন্ড কোং-এর স্বত্তাকিারী গাজী আজাদের সাথে মুঠো ফোনে সংযোগ স্থাপন করা না গেলেও উপ-ঠিকাদার জামালের সাথে কথা হয়। তবে উপ-ঠিকাদার জামাল সংস্কার কাজ আজাদসহ তারা তিনজনে যৌথ ভাবে পরিচালনার দাবী করলেও বাস্তবে সাইডে তাদের কখনোই কেউ দেখেনি।

কলাপাড়া বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান মোসলেম আলী খলিফা বলেন, ভবনটি নির্মানের সময় হেলে পড়েছিল। কয়েকবার সংস্কার করেও এটিকে ব্যবহার উপযোগী করা যায়নি। সেই ভবনে আবার এত টাকার সংস্কার কাজ কতটা যুক্তি সঙ্গত এটা আমি বুঝিনা।

বিআরডিবি’র অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব হাসান শিবলি জানান, ভবন সংস্কারের কাজ ঢাকা হেড অফিসের প্রকৌশল বিভাগ বাস্তবায়ন করছে। এ সংক্রান্ত কোন তথ্য নেই আমার কাছে।

কলাপাড়ায় সদ্য যোগদানকৃত ইউএনও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিআরডিবির ভবন সংস্কার কাজের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

বিআরডিবির প্রধান কার্যালয়, ঢাকার প্রকৌশল বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক বলেন, ’ভবনটি পরিত্যক্ত বা ঝূঁকিপূর্ন এ সংক্রান্ত লিখিত কোন চিঠি আমরা পাইনি। ভবনটি জরাজীর্ন থাকায় আমরা স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে সংস্কার করে দিচ্ছি।

বিআরডিবির সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম জানায়, নতুন ইউএনও ভবনের সামনে বিআরডিবি ভবনটি হওয়ায় তারা সৌন্দর্য্যরে স্বার্থে এটির সংস্কার কাজে বিঘœ সৃষ্টি করে। তারা ওখানে মডেল মসজিদ করতে চেয়েছিল। এছাড়া ভবনটি ঝূঁকিপূর্ন বা পরিত্যক্ত, সেই সিদ্ধান্ত ইএনওর দেয়ার এখতিয়ার নেই। বিআরডিবির আলাদা প্রকৌশল বিভাগ রয়েছে।