৪৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী ও স্বতন্ত্র প্রশাসনিক কাঠামো “নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর” বিলুপ্ত করে ভিন্ন অধিদপ্তরে একীভূত করার উদ্যোগের প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশের সব জেলায় একযোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে নার্স, মিডওয়াইফ ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুর ২টায় পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা এই সিদ্ধান্তকে “জনস্বার্থবিরোধী ও পেশার স্বকীয়তা ধ্বংসের অপচেষ্টা” বলে আখ্যা দেন এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার পর নার্সিং পেশার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে ১৯৭৭ সালে স্বতন্ত্র “সেবা পরিদপ্তর” গঠিত হয়, যা পরবর্তীতে ২০১৬ সালে “নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর”-এ উন্নীত হয়। দীর্ঘ ৪৮ বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অগ্রগতির এই অধিদপ্তরকে সম্প্রতি বিলুপ্ত করে অন্য অধিদপ্তরে একীভূত করার প্রস্তাব ওঠায় সারাদেশের নার্স ও মিডওয়াইফ সমাজে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি পেশা বিশ্বব্যাপী স্বতন্ত্র ও সম্মানজনক হলেও বাংলাদেশে এই পেশাকে বারবার অবমূল্যায়ন ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার শিকার হতে হচ্ছে। ২০১৬ সালে অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার আট বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনো পর্যন্ত নিয়োগবিধি, অর্গানোগ্রাম, স্ট্যান্ডার্ড সেট-আপ ও ক্যারিয়ার পাথ বাস্তবায়ন হয়নি। তারা আরও উল্লেখ করেন যে, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদের ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের দাবিসমূহ সরকার বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলেও ১৪ মাস পার হয়ে গেলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি।
পেশাগত মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১০ দফা দাবিতে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের স্বাধীনতা রক্ষা ও পেশাগত মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মানববন্ধন থেকে দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়:
১. নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর বিলুপ্তির উদ্যোগ বন্ধ ও জাতীয় নার্সিং কমিশন গঠন।
২. অধিদপ্তর প্রণীত নিয়োগবিধি, অর্গানোগ্রাম ও ক্যারিয়ার পাথ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন।
৩. সুপারিনটেনডেন্ট, সুপারভাইজার ও ইন্সট্রাক্টর পদে গ্রেড উন্নয়ন।
৪. স্কুল হেলথ নার্স ও কমিউনিটি হেলথ নার্স পদ সৃষ্টি ও নিয়োগ।
৫. ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সনদকে স্নাতক সমমান ঘোষণা ও বিএসসি নার্সদের জন্য প্রফেশনাল বিসিএস চালু।
৬. বেতন বৈষম্য নিরসন, ঝুঁকিভাতা ও উচ্চশিক্ষার ভিত্তিতে বিশেষ ইনক্রিমেন্ট প্রদান।
৭. ভূতাপেক্ষভাবে উচ্চতর পদোন্নতি ও সুপারনিউমেরারি পদ্ধতিতে প্রমোশন।
৮. স্বতন্ত্র নার্সিং ও মিডওয়াইফারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নার্সিং অনুষদের নেতৃত্ব নার্সদের হাতে প্রদান।
৯. বেসরকারি নার্সিং খাতে নিয়োগবিধি প্রণয়ন ও ভুয়া নার্স দমন।
১০. জোরপূর্বক পরিবর্তিত নার্সিং ইউনিফর্ম বাতিল।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মিডওয়াইফারি সোসাইটির (বিএমএস) সভাপতি রোজিনা খাতুন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন (বিএনএ) সভাপতি মোছাঃ ফাতেমা বেগম, সহ-সভাপতি মোঃ কাউসার মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক মোছাঃ জেসমিন আক্তার, কোষাধ্যক্ষ মোছাঃ শাহনাজ পারভীন মায়া, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আয়েশা ও মারজান প্রোমি, এবং স্বাস্থ্য ও ধাত্রীবিদ্যা প্রতিনিধি আফরোজা বেগম।
বক্তারা একযোগে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের বিলুপ্তি মানে নার্স সমাজের স্বকীয়তা ধ্বংস করা। এই অপচেষ্টা বন্ধ না হলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
মন্তব্য করুন