জামালপুরের বকশীগঞ্জে সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত একাত্তর টিভির উপজেলা সংবাদ সংগ্রাহক গোলাম রব্বানী নাদিম (৪৫) মারা গেছেন।

বুধবার অফিসের কাজ শেষে রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে তার মৃত্যু হয়।

নিহত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম (৪৫) উপজেলার নিলাখিয়া ইউনিয়নের গোমেরচর গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও নাদিমের সহকর্মীরা জানান, কাজ শেষে রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম ও তার সহকর্মী আল মুজাহিদ বাবু। পথে বকশিগঞ্জ উপজেলার পাথাটিয়ায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বুথের সামনে পৌঁছালে অতর্কিত আঘাত করে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে তাকে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাকে সড়ক থেকে মারধর করতে করতে টেনেহিঁচড়ে অন্ধকার একটি গলিতে নিয়ে যায় এবং তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। সেসময় সহকর্মী মুজাহিদ তাদের আটকাতে গেলে তাকেও মারধর করে দুর্বৃত্তরা।

পরে সহকর্মী মুজাহিদ ও স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। রাত ১২টায় সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি মারা যান।

সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের সহকর্মী আল মুজাহিদ বাবু বলেন, সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর অপকর্ম নিয়ে নাদিমসহ তারা কয়েকজন নিউজ করেছিলেন। তারপর থেকেই তিনি ক্ষিপ্ত তাদের ওপর। এ ঘটনায় তাদের নামে ডিজিটাল আইনে মামলাও করেন তিনি। সেই মামলা গতকাল ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দেয়। এ নিয়ে নাদিম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এর দুই-তিন ঘণ্টা পরেই রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে নাদিমের ওপর হামলা হয়।

হামলার ঘটনার বর্ননা দিয়ে তিনি বলেন, নাদিমকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। তারপর তাকে মারতে মারতে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবুর লোকজন। ঘটনার সময় ওই গলিতে অন্ধকারে আড়ালে দাঁড়িয়েছিলেন চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবু। সেসময় তার ছেলে ফয়সাল, রিফাত, রেজাউল, মনির, সাইদসহ আরও কয়েকজন ছিলেন। মারধরের সময় তিনি আটকাতে গেলে তাকেও তারা মারধর করেন তারা। পরে তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী চলে যায়।

বিগত ১০ মে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। এ নিয়ে একাধিক সংবাদমাধ্যমে নাদিমের করা বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে ২০ মে সাবিনা তার স্বামী বাবুকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার অথবা পদ থেকে তার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। বাবু জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ নিয়েও সংবাদ করেন নাদিম।

এর জেরে গত ১৪ মে ময়মনসিংহ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে জামালপুরের নাদিমসহ দুইজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। ১৪ জুন আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়।

নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম অভিযোগ করে বলেন, সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তার স্বামীর ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। আগেও তিনি নানাভাবে তাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজনই হামলা করে তাকে হত্যা করেছেন। তিনি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এর আগেও সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। গত ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বকশীগঞ্জ উপজেলার মধ্যবাজার এলাকায় সে ঘটনা প্রসঙ্গে সাংবাদিক নাদিম বলেছিলেন, রাজাকার ইস্যুসহ আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করায় আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের নির্দেশে তার সমর্থক স্বপন, শেখ ফরিদ, শামীম তার ওপর হামলা করে।

জামালপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিহত সাংবাদিকের ওপর হামলাকারীদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশের পাঁচটি দল মাঠে কাজ করছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে।