পটুয়াখালীর মহিপুরে ধুলাসার ও ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যস্থ দীর্ঘ ১৩ কিলোমিটার সড়কে অর্ধশত বছর ধরে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।
কাঁদা-মাটির সড়কে বর্ষা মৌসুমে যান চলাচল সহ যাতায়াতের অনুপোযোগী হয়ে পরে এবং শুকনা মৌসুমে সৃষ্ট গর্ত ও খানাখন্দের বেহাল দশায় চরম বেকায়দায় এলাকাবাসী।

দুই ইউনিয়নের অনেক বাসিন্দারা বলছেন, সড়কটি পাঁকা হলে একদিকে যেমন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমবে। অন্যদিকে মুমূর্ষু রোগী বহনে আর বেগ পেতে হবে না। সড়কের উন্নয়নে শ্রমজীবী মানুষেরা সহজেই জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন। এলাকাবাসী দ্রুত সময়ের মধ্যে কতৃপক্ষের কাছে সড়কটি পাকা করনের দাবি জানান।
তারা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সড়কে যানচলাচল সহ যাতায়াতের ভোগান্তি লাঘবের প্রতিশ্রুতি দিয়েই যাচ্ছেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছর অতিক্রম হলেও উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি এই ১৩ কি.মি. সড়কের। যেখানে সামান্য বৃষ্টির পানিতেই সড়কে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরে । এখন প্রতিনিয়তই বর্ষায় মানুষের দুর্ভোগ দৃশ্যমান।

এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ (অধ্যক্ষ) মোঃ মহিব্বুর রহমান মহিব জানান, ইতিমধ্যে উপজেলার বেশ কয়েকটি রাস্তার জন্য কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুত এই সড়ক গুলোতে মানুষ ও যান চলাচলের উপযোগী হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ধুলাসার, ডালবুগঞ্জ এই দুই ইউনিয়নের মধ্যস্থ সংযোগস্থল অনন্তপাড়া গ্রামের খাপড়াভাঙ্গা ব্রিজ হতে মহিপুর সদর থানা পর্যন্ত দীর্ঘ ১৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। ঐ সড়কটি কাঁচা থাকায় জনদুর্ভোগ চরমে। ঐ সড়ক দিয়ে বর্তমান বর্ষা মৌসুমে প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষ কাঁদার মধ্যে যাতায়াত করে থাকেন। এ মৌসুমে সড়কে যান চলাচলের কোনো সুযোগই নেই। এ অবস্থায় পায়ে হেঁটে চলাটাও দূঃসহ অবস্থা স্থানীয়দের। সড়ক দিয়ে ইউনিয়নের সুরডুগী, তারিকাটা, মনসাতলী, সেরাজপুর এবং উপজেলা সদর থেকে বিভিন্ন গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা যাতায়াত করে থাকেন। বিকল্প কোন রাস্তা না থাকায় এলাকাবাসী বাধ্য হয়েই কাঁদা-পানি মাড়িয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে। এযেনো মরার উপরে খরার গা!

বিশেষ করে এই সড়ক ধরে মহিপুর থানা, কুয়াকাটা সরকারি হাসপাতাল, কলাপাড়া উপজেলা সদরসহ উপজেলার সকল কার্যক্রমে একমাত্র রাস্তাটি ব্যবহার করতে হয় বলে এক প্রকার বাধ্য তারা। এছাড়াও অফিস আদালত থেকে শুরু করে সরকারি বাংক, জরুরি সেবা ফায়ার সার্ভিস সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সুফল থেকে বঞ্চিত অত্র দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের এই বর্ষা মৌসুম নাগাদ। একান্ত প্রয়োজন ব্যাতীত কেউই এই সময়ে কোথাও যেতে পারে না। এবং ভোগান্তিতে গ্রামীণ হাটবাজারের ব্যবসায়ীরাও। যেমন সড়কে কাঁদা থাকায় সাপ্তাহিক বাজার সহ দোকানপাটে আসছেনা কেউ। এতে একদিকে বেচা বিক্রি নেই, অন্যদিকে গ্রামীন ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের বেকায়দা যেন শেষ হয়না কয়েক যুগে!

ডালবুগঞ্জের সুরডুগী গ্রামের হাচিনা বেগম জানান, আমি ফ্যামিলী প্লানের ডাক্তারি পেশায় কর্মরত রয়েছি। এখানে দুই ইউনিয়নে এমবিবিএস ডাক্তার ও সরকারি হাসপাতাল কাছাকাছি না থাকায় এই এলাকার কোন মায়ের বাচ্চা প্রসবের জন্য অসুস্থ হলে আমাকে যেতে হয়। কিন্তু রাস্তা কাঁচা থাকায় অনেক সময় যেতে পাড়িনা! এতে ঘটে দূর্ঘটনা। তাই দ্রুত এই রাস্তাটি পাকা করা একান্ত প্রয়োজন।

ভুক্তভোগী ঔষধ বিক্রেতা হাসান বলেন, কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের একটি মাত্র সড়ক এটি। বর্ষার মৌসুমে এই রাস্তা খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। আর শুষ্ক মৌসুমে চলা যায় না ধুলোবালিতে, অনেক সময় মাটি পিছলে বয়স্ক মানুষ পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। এসব দেখার যেন কেউ নেই।

চাপলি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, শুক্রবার এই বাজারে হাঁট বসে, এখানে বৌলতলী, নয়াকাটা, তারিকাট্‌ সুরডুগী, খাপড়াভাঙ্গা সহ কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন এই বাজারে ক্রয় বিক্রয়ের জন্য। যেসকল মানুষ সপ্তাহিক হাট করতে বাজারে আসেন কিন্তু বৃষ্টি হলে সিংহভাগ মানুষ বাসা বাড়িতে থেকে যায়। চলাচলের একমাত্র সড়কটি পাঁকা করণ এখন সময়ের দাবি।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিডি) অফিস বলছেন, স্থানীয় এমপি মহোদয় অনেক গুলো রাস্তার জন্য চাহিদা দিয়েছেন। দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রস্তাবনা আকারে পাঠানো হবে। তবে ভেড়ীবাঁধ সড়কে কাজ করা আমাদের এলজিইডির জন্য কঠিন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় থাকায় তাদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করা যাচ্ছেনা। তবে সাধারন মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি লাঘবে আমরা সমন্বয় করে কাজ করবো। এ ব্যাপারে পাউবোর সাথে আমরা কথা বলবো।

পটুয়াখালী-০৪ আসনের সংসদ সদস্য (অধ্যক্ষ) মোঃ মহিব্বুর রহমান মহিব জানান, সরকারের কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন হলেও এই কাঁদামাখা রাস্তার জন্য কোন কাজে আসছে না। এসব বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে।