পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)-এর ক্যাম্পসের স্বপ্নিল সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক, ঐতিহ্যবাহী লাল কমল ও নীল কমল লেক দুইটি হুমকিতে পড়েছে।

বর্তমানে লেক দুইটির চারিপাশের পাড়ের মাটি সরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় জলবায়ু ও দুর্যোগপ্রবণ আবহাওয়ায় যেকোনো সময় লেকের পাড়ের মাটি ধসে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

এই অবস্থায় লেকদুইটির চারপাশে টেকসই পাইলিং ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি শিক্ষার্থীরাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ঐতিহ্যবাহী লাল কমল ও নীল কমল লেক দুইটি সংরক্ষনের জন্য ইউজিসির কাছে বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই লেকদুটির চারিপাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, দেখা মিলবে অতিথি পাখিদের। এই দুই লেক ঘিরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য গড়ে উঠেছে। লেকের ওপর দৃষ্টি নন্দন কাঠের সেতু ও লেকের পাড়ের রয়েছে বেঞ্চের ব্যবস্থা। এখানে বসে একটু স্বস্তি খুঁজি সকলে। কিন্তু এখন লেকের চারপাশের ভাঙা পাড় ও মাটি পুরোপুরি সরে গাছ হেলে পড়ার ভয়ে আতঙ্ক নিয়ে পাশ দিয়ে চলঅচল করতে হচ্ছে । এই লেকদুইটি শুধু সৌন্দর্যের নয়, নিরাপত্তার বিষয়ও বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি টানা বৃষ্টিপাত এবং কালবৈশাখী ঝড়ের প্রভাবে লেকদুটির পাড়ের মাটি ধসে পড়ছে। বিশেষ করে লাল কমল লেকের পাশে অবস্থিত প্রায় অর্ধশত বছরের পুরনো নারিকেল গাছ ও এক যুগেরও বেশি বয়সী মেহগুনি গাছগুলোর গোড়ার মাটি সরে গিয়ে গাছগুলো এখন যেকোনো সময় উপড়ে পড়ার আশঙ্কায় আছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনৈতিক সংকট বিরাজ করলেও পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইএসডিএম অনুষদের শিক্ষার্থী ও ইএসডিএম ক্লাবের সভাপতি আফিয়া তাহমিন জাহিন বলেন,” আমরা প্রতিদিনই ক্লাস শেষে লেকের দৃষ্টি নন্দন কাঠের সেতুর ওপর , আবার কেউ লেকের পাড়ের বেঞ্চের ওপর বনি। ছায়াঘেরা পরিবেশ এই লেকের পাড়ে বসলে একটু স্বস্তি খুঁজে পাই। কিন্তু এখন লেকের চারপাশের পাড় ভেঙে পড়ছে। এতে অতঙ্কে থাকতে হয় তাদের।

আইন অনুষদের শিক্ষার্থী মীর মোঃ নুরুন-নবী বলেন, আসলে আমাদের এই ক্যাম্পাসটি ছবির মতো। সবুত প্রকৃতিতে ঘেরা, এমন শান্ত পরিবেশ রয়েছে এই ক্যাম্পাসে । বিভিন্ন এলাকার লোকজন আমাদের ক্যাম্পাস তেখে মুগ্ধ হয়েছেন। কিন্তু ভাঙা পাড় আর ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো দেখে সকলেই হতাশ হবেন। যেতে হয়। কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দুর্ঘটনা ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মুহাইমিনুল আলম ফাইয়াজ, কৃষি অনুষদের সহকারী অধ্যাপক ড. সগিরুল ইসলাম মজুমদার ও ড. মুহাম্মাদ ইকবাল হোসেন বলেন,”লেকদুটির প্রাকৃতিক পরিবেশ শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, স্থানীয় বাসিন্দা ও লেকের পাড়ের মেহগনি গাছগুলোতে অতিথি পাখিদের আবাসস্থল হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই লেক ঘিরেই পবিপ্রবির জীববৈচিত্র্য গড়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, শিক্ষার পরিবেশ, জননিরাপত্তা এবং স্থানীয় অর্থনীতিওে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন, “পরিবেশবান্ধব ও টেকসই ক্যাম্পাস গড়তে আমাদের প্রশাসন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর একারণে লেখদুইটির সংরক্ষনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর, ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, লেকদুইটির সংরক্ষন জরুরী হয়ে পড়েছে। “বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনৈতিক সংকট রয়েছে।

তিনি বলেন, লাল কমল ও নীল কমল নামের দুটি লেক আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই দুটি লেক শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, বরং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও স্থানীয় জলবায়ু নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। তাই লেক দুটির চারপাশে পাইলিংয়ের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি আমরা।”

ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) কাছে এ বিষয়ে বিশেষ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে । আর এব্যাপারে আমরা ইউজিসি’র সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে যাচ্ছি। মঞ্জুরী কমিশন থেকে বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে এ বছরের বাজেট থেকেই অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান করবেন বলে আশা করছি এবং বরাদ্দ পাওয়া গেলে এই উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।