কলাপাড়া-কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কের ১১ কি:মি: রাস্তা পর্যটকদের একমাত্র যাতায়াতের পথ । দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই সড়ক দিয়ে পর্যটক-দর্শনার্থীরা পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা অবলোকন করতে আসেন। উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠায় পর্যটকরা এখন কুয়াকাটা মুখি হচ্ছে। আগত এসব পর্যটক দর্শনার্থীরা কুয়াকাটা প্রবেশমুখে এসে খানাখন্দে ভরা ঝুকিঁপুর্ণ সড়ক দেখে অবাক হচ্ছেন। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আলীপুর থ্রি পয়েন্ট থেকে সড়কের পাখিমারা পর্যন্ত সড়ক নয় যেন মরণ ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছে। সড়ক জুড়ে বড় বড় গর্তের পাশাপাশি হাটু সমান পানি জমে রয়েছে। পর্যটকরা সারা পথ স্বাচ্ছন্দে আসলেও কুয়াকাটা প্রবেশমুখে এসে সড়কের এমন বেহাল অবস্থা দেখে এখানকার জনপ্রতিনিধি, সড়ক ও জনপথ বিভাগের দ্বায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কুয়াকাটা নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষন করছেন। এ পথে চলাচলকারী দুরপাল্লার পরিবহনসহ যানবাহনগুলো চলাচল করছে চরম ঝুকিঁ নিয়ে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের পটুয়াখালীর প্রকৌশলী সড়কের এমন দুরাবস্থার শীঘ্রই পরিবর্তন হবে বলে আশ^স্ত করলেও তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ কয়েক বছর সংস্কার না করায় সড়কের বেশিরভাগ স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থান দেবে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যাচ্ছে সড়কটি। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বিকল হচ্ছে যানবাহন। দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা। সড়ক ও জনপথ বিভাগ দুই দফায় ইটের খোয়া ফেলে গর্তগুলো ভরাট করলেও কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবার পুর্বের ন্যায় হয়ে গেছে। এ সড়কে যাতায়াতকারীরা জানান, পুর্বের চেয়ে এখন আরো খারাপ অবস্থা হয়েছে। সড়কে পানি জমে চাষের জমিতে পরিনত হয়েছে।

রবিবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মামলা জটিলতায় দীর্ঘ এক যুগেও হয়নি কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কের ১১ কিলোমিটার অংশের সংস্কারকাজ। ২০০৯-২০১৪ অর্থবছরে কলাপাড়ার পাখিমারা বাজার থেকে আলীপুর মৎস্যবন্দরের শেখ রাসেল সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১১ কি:মি: অংশের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করে খুলনার দি রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তখন এর নির্মাণ ব্যয় ছিল ২০ কোটি টাকা। কাজটি মানসম্মত না হওয়ায় তখন ঠিকাদারের বিল আটকে দেয় পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দুটি দল সরেজমিনে তদন্তও করেন। তদন্তকারী দলের পক্ষ থেকেও কাজের গুণগত মান ভালো হয়নি বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। নিম্নমানের কাজের কারণে তখন সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৮ কোটি টাকার বিল আটকে দেয়। তবে এ কাজ বাবদ ১২ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দি রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের প্রতিনিধি রাশেদুল ইসলাম চুড়ান্ত বিল দাবি করে ২০১৪ সালে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলার কারণে ১১ কি:মি: সড়কের ওপর সংস্কার কাজে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। যারফলে গত দশ বছর ধরে সংস্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে থাকে পাখিমারা বাজার থেকে শেখ রাসেল সেতু পর্যন্ত এ অংশের সড়কটি। তবে কুয়াকাটা পর্যটন এলাকায় যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হওয়ার কারণে সওজ কর্তৃপক্ষ এ অংশে জরুরি মেরামতের কাজ করে সচল রাখার চেষ্টা করে সড়কটি।

ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় আগত পর্যটক নিজাম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, থুব স্বাচ্ছন্দ্যেই ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় এসেছি। তবে সারা পথ ভালোভাবে আসলেও কুয়াকাটার প্রবেশমুখে এসে কলাপাড়ার পরে সড়কটি অনেক খারাপ। ২০ মিনিটের পথ আসতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টারও বেশি। তিনি আরো বলেন, এখানকার জনপ্রতিনিধি ও সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা কি করেন। তারা উদ্যোগ নিলে সড়কের এমন অবস্থা থাকতে পারে না। সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

কুয়াকাটা-আলীপুর এলাকার অটোরিকশা চালক মো: জয়নাল মিয়া জানান, সড়কের বেহাল অবস্থা। অনেকবার যাত্রিসহ গাড়ি নিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছি। এই সড়ক দিয়ে গাড়ি চালালেই বিভিন্ন যন্ত্রাংশসহ ব্যাটারী নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য সড়কের ওই অংশে এখন আর গাড়ি চালাই না।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের পটুয়াখালী নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ জামিল জানায়, এখন আপাতত মামলা জটিলতা নেই। সড়ক সংস্খারের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বর্ষার কারণে এখন কাজ করা সম্ভব নয়। আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে বলে নিশ্চিত করেন।