আবহমান বাংলার এক চিরায়ত সংস্কৃতি পিঠা-পুলির উৎসব। বাংলার ঐতিহ্যবাহী শীতকালীন এই উৎসবের ধারাকে অব্যাহত রাখতে গতকাল মঙ্গলবার আয়োজন করা হয় পিঠা উৎসব। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত হলো পিঠা উৎসব অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।

মঙ্গলবার শহরের জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম প্রাঙ্গনে এ পিঠা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী। উৎসবে সহযোগিতা করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন।

পিঠা উৎসবে নানান রকম পিঠার সমাহারে সজ্জিত ছিল স্টলগুলো। উক্ত উৎসবে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পিঠা উৎসবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক, দর্শনার্থী, আমন্ত্রিত অতিথিদের ঢল নেমেছিল এ উৎসবে। বিভিন্ন স্টলে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। স্টলগুলোতে পিঠা বিক্রির ধুম ছিল লক্ষ্যনীয়। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা, আমন্ত্রিত অতিথি, দর্শনার্থীদের পদভারে উৎসব স্থল ছিল উৎসবের আমেজে মুখরিত। আর অনুষ্ঠানকে ঘিরে ছিল সেলফি তোলার ধুম। বেলুন, ফ্যাস্টুন, বাহারি রঙের পতাকা দিয়ে সাজানো অডিটোরিয়াম প্রাঙ্গন ছিল উৎসবের আমেজ। এরি মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানে আগতদের বিমোহিত করে রাখে।

গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম শীতকালেই বেশি পড়ে। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর বা সন্ধ্যায় গাঁয়ের বধূরা চুলার পাশে বসে ব্যস্ত সময় কাটায় পিঠা তৈরিতে। অতিথি বিশেষ করে জামাই ও আত্নীয়-স্বজনদের এ সময় দাওয়াত করে পিঠা খাওয়ানো হয়। এ সময় খেজুরের রস থেকে গুড়, পায়েস এবং নানারকম মিষ্টান্ন তৈরি হয়।

বাঙালির লোকজ ইতিহাস-ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই। পিঠা-পায়েস সাধারণত শীতকালের খাবার হিসাবে অত্যন্ত পরিচিত এবং মুখরোচক খাদ্য হিসাবে বাঙালি সমাজে আদৃত। আত্মীয়স্বজন ও পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনকে আরও দৃঢ় ও মজবুত করে তুলতে পিঠা-পুলির উৎসব বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম শীতকালেই বেশি পড়ে।

সবচেয়ে জনপ্রিয় পিঠা হচ্ছে ভাপা পিঠা। এছাড়াও আছে চিতই পিঠা, দুধচিতই, পাটিসাপটা, নকশি পিঠা, মালাই পিঠা, পাকন পিঠা, ঝাল পিঠা ইত্যাদি। বাংলাদেশে প্রায় শতাধিক ধরনের পিঠার প্রচলন রয়েছে।

শীতকালে শুধু গ্রামবাংলায়ই নয়, শহর এলাকায়ও পিঠা খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। ইদানীং শহরেও পাওয়া যায় শীতের পিঠার স্বাদ। পিঠা-পুলি আমাদের লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই প্রকাশ। আমাদের গ্রামবাংলায় এসব পিঠা-পার্বণের আনন্দ-উদ্দীপনা এখনো মুছে যায়নি। পিঠা-পার্বণের এ আনন্দ ও ঐতিহ্য যুগ যুগ টিকে থাকবে বাংলার ঘরে ঘরে।

পিঠা-উৎসব উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু তালেব। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়।

আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাজী মোহাম্মদ লিটন আহমেদ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত, উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইউসুফ হোসেন খান, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা অসীম কুমার কর, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার মো. ফারাজুল কবিরসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। বিশেষ করে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যনীয়। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের আগমনে জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম মিলনমেলায় পরিণত হয়। রাত ১০ টায় ভাঙ্গে এ মিলনমেলা।