প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। এখানকার সৌন্দর্য আকৃষ্ট করে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের। পটুয়াখালীর সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটার সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে হাজারো পর্যটক ছুটে আসেন প্রতিনিয়ত। তবে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও উন্নত হয়নি সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ। যত তত্র ময়লা আবর্জনা জেলেদের জাল, নোঙ্গর করে রাখা নৌকা, স্থানীয় বাসিন্দাদের পলিথিনের ঝুপড়ির ঘর, শুটকি ব্যবসায়ীদের যত্রতত্র শুটকি মাছ শুকানো নষ্ট করছে সৈকতের পরিবেশ ও সৌন্দর্যকে। সৌন্দর্য নিয়ে কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনতায় নেতিবাচক মন্তব্য করছেন পর্যটকরা। ভ্রমণ বিমুখ হচ্ছে দেশী বিদেশী পর্যটকরা।
দেশের সর্ব দক্ষিনের পর্যটন নগরী কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করলেও সৈকতের অপরিচ্ছন্নতা ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে চরম আপত্তি রয়েছে পর্যটকদের। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা।
ঢাকা থেকে আগত পর্যটক আশরাফুল-নদী ইসলাম দম্পতি বলেন, সমুদ্র সৈকতের মধ্যে যে পরিমান ময়লা আবর্জনা, অপরিচ্ছন্নতা, এবং অস্বাস্থকর পরিবেশের মধ্যে আমাদের স্বাভাবিক চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। এসব দেখে আসলে আমাদের কুয়াকাটা সৈকতের ভ্রমণের যে মানসিকতা তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয় তাহলে কুয়াকাটা ভ্রমণে আরো অনেক দেশি-বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট হবেন। বিদেশি পর্যটকরা এখানে রিফ্রেশমেন্ট এর জন্য আসে। সৈকতের পরিবেশ এভাবে থাকলে বিদেশি পর্যটকরা আর আসবে না। এতে পর্যটন খাত হুমকির মুখে পরবে।
খুলনা থেকে স্বপরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটক হাবিবুল্লাহ নিয়াজ বলেন, এই সৈকতে দেখা গেছে দের কিলোমিটার জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে বালুর বস্তা ফালানো, এসব বালুর বস্তায় থেতলে আমরা পড়ে যাই, অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হই। এসকল অব্যবস্থাপনার মধ্যে শিশু ও নারীদের চলাফেরা করতে খুবই কষ্ট হয়। আর জোয়ারের সময় গোসলে নেমে নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হই আমরা। সৈকতের এমন পরিবেশে কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলরা প্রশ্ন আসে। বাউফল থেকে আগত দর্শনার্থী নাঈম আব্দুল্লাহ বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পরিবেশের কোন পরিপাটি নেই। সৈকতের মধ্যে ময়লা আবর্জনা, জাল ফালানো, জেলেদের অপরিকল্পিত ভাবে রাখা নৌকা, পলিথিন দিয়ে ঝুঁপড়ি ঘর, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ব্যবসায়ীদের ভাসমান দোকানপাট দেখে আমরা রিতিমতো হতাশ। এমন পরিবেশ দেশের একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রের সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যের সাথে কখনোই কাম্য নয়।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার জানান, কুয়াকাটা পৌরসভার পক্ষ থেকে সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় সর্বাত্বক চেষ্টা করা হচ্ছে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত তদারকি পৌরসভার আওতাধীন নয়, এটি বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির দায়িত্ব। আমি এই কমিটির মাত্র একজন সদস্য। চাইলেই আমার পক্ষে এই সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষার সকল ভূমিকা নেয়া সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন এই সৈকতের প্রতিনিধি। তাদের সুদৃষ্টি থাকলে দ্রুত পরিবর্তন করা সম্ভব এই সমুদ্র সৈকত। বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে স্থানীয় কোনো ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকায় এর সঠিক তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও পর্যটন ভিত্তিক কুয়াকাটা পৌরসভা হওয়ায় আমরা আধুনিক পর্যটন নগরী গড়ে তুলতে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। উন্নয়নের গতিশীলতা ধরে রাখতে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র রূপদানে সরকারের একান্ত সুদৃষ্টি কামনা করেন এই জনপ্রতিনিধি।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কুয়াকাটা সৈকতে যেটুকো জায়গা তার চেয়ে বেশি রয়েছে ভাসমান ব্যবসায়ীদের দোকানপাট। এদেরকে আমরা উচ্ছেদ করে দিচ্ছি তারা পুনরায় এসে সৈকতের জায়গা দখল করে অপরিকল্পিতভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। আমরা এ বিষয় নিয়ে কাজ করছি। বিকল্প একটি জায়গা দেখেছি, সেখানে হয়তো তাদের যদি একটি মার্কেট করে দেয়া যেতে পারে আশা করছি কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্য বাড়বে। কুয়াকাটা সৌন্দর্যের প্রশ্নে আমরা কোন আপোষ করবো না। কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা হলে বাড়বে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা, বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয় এমন মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন