পটুয়াখালীর পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় ইউনিয়নের আলোচিত ২৮৫ মিটার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন সংস্করনের দায়িত্ব নিলেন পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার। প্রায় দুই যুগের অবসান শেষে কুয়াকাটা পৌরসভা ও লতাচপলী ইউনিয়নের মধ্যস্থ সামান্য ইটের বেহাল সড়কে পৌর মেয়র নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন সংস্করনের কাজ করছে।
এই সড়কটি ঘিরে পর্যটন নগরীর বিকল্প যাতায়াত মাধ্যমের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বলে পৌর মেয়র এমন উদ্যোগ গ্রহন করেছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
তবে স্থানীয় বাসিন্দারা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ বছর অতিক্রম হলেও সামান্য সড়কটুক অব্যবস্থাপনার ফলে কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত সুবিধায় বঞ্চিত ছিলো। এবং সমগ্র পৌরসভার সাথে সেতুবন্ধনের প্রধান বাধা ছিলো সামান্য এই সড়ক।
কুয়াকাটা পৌরসভা ও লতাচাপলী ইউনিয়নের মধ্যস্থ ২৮৫ মিটার সংযোগ সড়কে উন্নয়নে বদলে যাবে পর্যটন এলাকায় যাতায়াতের ভোগান্তি। বিশেষ করে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় পর্যটক মৌসুম ছাড়াও সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে মহাসড়কে প্রায় দুই কিলোমিটার জুরে তীব্র জানজট নিরসনে গুরুত্ব বহন করবে এই সড়কটি। পৌরসভা এলাকার বিকল্প এই সড়ক ধরে পর্যটকরা খুব সহজেই বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন যানজট নিরসনে। এবং স্থানীয় বাসিন্দারা কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই সামান্য এই সড়ক ধরে অল্প সময়ের মধ্যে পারবেন বাজার-ঘাটে যেতে।
এছাড়াও পর্যটক দর্শনীয় স্পট মিশ্রিপাড়া সীমা বৌদ্ধ বিহার দর্শনে চলাচলের অনুপযোগী প্রায় তিন কিলোমিটা কাঁচা সড়কে যাতায়াতে বেগ পেতে হবে না। সামান্য এই সড়কটুক পাকা হলে পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য বিকল্প এই সড়কটি একটি অধ্যায়ের সূচনা হবে বলে অভিমত নানা শ্রেনীর মানুষের। তবে পর্যটক সহ স্থানীয়রা পর্যটক দর্শনীয় স্পটে সরাসরি যাতায়াত সুবিধা পেতে বিকল্প আরেকটি সড়কে উন্নয়নের লক্ষ্যে কতৃপক্ষের নিকটে দাবি জানিয়ে আসলেও দুই যুগের ব্যবধানে তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। মাত্র ২৮৫ মিটার সড়কের দ্বায়ভার কে নিবেন এ নিয়ে লতাচাপলী ইউনিয়ন ও কুয়াকাটা পৌরসভা কতৃপক্ষের মধ্যে থাকা দীর্ঘ বছর দ্বিধা-দ্বন্দে সমগ্র পৌর এলাকার সঙ্গে সেতুবন্ধনের প্রধান বাঁধা ছিলো এই সড়কটুক। লতাচাপলী ইউনিয়ন ও কুয়াকাটা পৌরসভার প্রায় সিংহভাগ সড়কে এক যুগের ব্যাবধানে আমূল পরিবর্তন হলেও পর্যটকদের যাতায়াতের বিকল্প বিশেষ মাধ্যম এই সামান্য সড়কে উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি।
এতে স্থানীয় বাসিন্দারা সহ পর্যটক এবং যানবাহন চলাচলের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে প্রায় দের যুগ। বিভিন্ন সময় পৌরসভা ও ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে কেউ বলেছেন ইউনিয়ন, কেউ বলেছেন পৌরসভার অধীনস্থ রয়েছে সামান্য এই সড়ক। যার বেড়াজালে দের যুগের বেশি সময় ধরে এই সড়কটি ছিলো অবিভাবকহীন। সামান্য এই গুরূত্বপূর্ণ সড়ক নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে পর্যটক যাতায়াতের বিকল্প মাধ্যম হওয়ায় কুয়াকাটা পৌর মেয়রের উন্নয়ন সংস্করনে এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অত্র এলাকার বাসিন্দারা।
রিতিমতো প্রশাংসায় ভাসছেন বর্তমান কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার। কুয়াকাটা পৌরসভার পাঞ্জুপাড়া গ্রামের ৮নং ও নবীনপুর ৬নং (কচ্ছপখালী গ্রাম) ওয়ার্ডের শেষ সীমানার মধ্যস্থ লতাচাপলী ইউনিয়নের অধীনস্থ দোভাষীপাড়া গ্রামের মধ্যে থাকা এই ২৮৫ মিটার সড়ক উন্নয়ন সংস্করন শেষ হলে কয়েক গ্রামের বাসিন্দাসহ কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের যোগাযোগ ব্যাবস্থায় বিশেষ বিকল্প মাধ্যম হবে বলে অভিমত স্থানীয়দের।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ ইয়াসিন বলেন, আমাগো পৌর এলাকার প্রায় হগল রাস্তা পাকা অইলেও ইউনিয়ন ও পৌরসভার মধ্যস্থ থাকা এই সামান্য রাস্তায় বছরের পর বছর ধইরা পইরা ছিলো, কোনো উন্নয়ন অয়নাই। আরেক বাসিন্দা ইউনুচ হাওলাদার বলেন, সামান্য এই রাস্তাটুকু ভালো না থাহায় মোগো এলাকার হগল মানষের চলাচলে কষ্ট হরতে অইছে। তয় এহন এই রাস্তা পাকা অইয়া গেলে মোগো খুশির আর শেষ নাই। এই সড়ক ধরে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করেন মোঃ কবির।
তিনি জানান, সামান্য এই রাস্তায় অব্যবস্থাপনার কারনে আমাদের কয়েক কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয় জরুরি কোনো কাজে। প্রাইভেট গাড়িতো দূরের কথা এই আধা কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে সামান্য দুই চাকার একটি মটর সাইকেলও চলাচল করতে পারে না। এ নিয়ে আমরা বার বার দাবি জানিয়ে আসলেও কতৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
তিনি আরো বলেন, কুয়াকাটা পৌরসভার সাথে একটি সেতুবন্ধন এই সামান্য সড়ক। কুয়াকাটা ভ্রমন পিপাসু পর্যটকদের কাছে এই সড়ক ছাড়াও পর্যটক দর্শনীয় স্পটে সরাসরি যাওয়ার জন্য যে সড়কটি রয়েছে তা বর্ষা মৌসুমে কাদা-মাটির মিশ্রনে নরম থাকে, আর শুকনা মৌসুমে থাকে ধুলো বালির প্রকোপ। পর্যটকদের উন্নত সেবাদানে এই সড়কটির দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের জোর দাবী জানিয়েছেন অত্র এলাকার প্রায় অর্ধ শতাধিক বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আনসার উদ্দিন মোল্লা জানান, আমাদের পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নেই। পৌরসভার পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ আছে। ইউনিয়ন ও পৌরসভার জনসাধারনের চলাচলের সুবিধার্থে যদি পৌরসভা কতৃক সড়কের উন্নয়ন সংস্করণ করা হয় আমার সে বিষয়ে আপত্তি নেই।
সাবেক মেয়র থাকাকালীন আমি এই সড়কে নো-অবজেকশান সার্টিফিকেট দিয়েছিলাম। কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের যাতায়াত সুবিধার কথা ভেবেই প্রথমে নিজস্ব অর্থায়নে এই সড়কের উন্নয়ন সংস্করণের কাজ শুরু করি।
কুয়াকাটা বাস টার্মিনাল থেকে পূর্ব পাশ হয়ে এই সংযোগ সড়ক ব্যবহারে কুয়াকাটায় পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য আরো একটি বিকল্প মাধ্যম যোগ হলো। ইতোমধ্যে সড়কে উন্নয়ন সংস্করণের কাজ চলমান থাকাকালীন টেন্ডার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আশা করছি সকল সুবিধা নিশ্চিত করতে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। খুব শিগগিরই কুয়াকাটার নান্দনিক রূপ বদলে যাবে। আধুনিক মানের পর্যটন নগরী সৃষ্টির লক্ষ্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।