
শ্রীমঙ্গলে উপজেলা প্রশাসনের সাথে উপজেলায় বসবাসরত বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠির প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় সভা অনু্ষ্ঠিত হয়েছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে আজ রবিবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের কনফারেন্স হলে এই সভা অনু্ষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন। প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) সন্দ্বীপ তালুকদার, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন উপজেলা প্রশাসনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মৃনাল কান্তি দাশ।
মতবিনিময় সভায় শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বসবাসরত বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়ন, তাদের পাড়া, পল্লী, পুঞ্জির বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা, আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহন, রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন, পানীয় জলের সু-ব্যবস্হা, সিড়ি নির্মান প্রভৃতি বিষয় আলোচনায় উঠে আসে।
মতবিনিময় সভায় উপজেলা নির্বাহী আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন জানান, ইতোমধ্যে বিভিন্ন পুঞ্জিতে সিঁড়ি তৈরি, পানীয় জলের ব্যবস্হা, স্কুল প্রতিষ্ঠা, স্কুলে আসবাবপত্র প্রদান, রাস্তা-ঘাট নির্মান করা হয়েছে। বাকীগুলোর জন্য প্রকল্প গ্রহন করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, নৃ-গোষ্ঠির পাড়া, পল্লী ও পুঞ্জিতে কমিউনিটি ট্যুরিজম ব্যবস্হা চালু করা হবে। নৃ-গোষ্ঠির জন্য ইতোমধ্যে মাল্টিপারপাস ভবন নির্মান করা হয়েছে। স্হানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্পের ( ইউজিডিপি) আওতায় জাইকার অর্থায়নে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই মাল্টিপারপাস সেন্টার নির্মান করা হয়েছে। এখানে নৃ-গোষ্ঠির নিজস্ব সংস্কৃতির আলোকে কালচারাল প্রোগ্রামসহ তাদের তৈরি বিভিন্ন পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির ব্যবস্হা থাকবে। খুব শীঘ্রই এই মাল্টিপারপাস ভবন উদ্বোধন করা হবে বলে জানান তিনি।
দেশে বৈচিত্র্যময় এক উপজেলা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। স্বচ্ছ নীল জলরাশির হাওর, পাহাড়-টিলা বেষ্টিত চা-বাগান, লেবু- আনারস বাগান, রাবার চাষ, উঁচু-নিচু টিলা আর সমতল ভূমিতে দেশের সর্বাধিক চা-বাগান সমৃদ্ধ পর্যটন উপজেলা শ্রীমঙ্গল। উপজেলা প্রশাসনের মতে, আছে ৪০ টিরও বেশি নৃ-তাত্বিক জনগোষ্ঠির বাস। নৃ-গোষ্ঠির বিচিত্র জীবনাচার ও সংস্কৃতি এ উপজেলাকে করেছে বৈচিত্র্যময় ।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়নের বিদ্যাবিল কিংবা হরিণছড়া শ্রীমঙ্গল উপজেলার অত্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকা। এখানে গারো নৃ-গোষ্ঠীর বাস। উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের জাম্বুরাছড়া কিংবা জুলেখা পুঞ্জি তো ভারত সীমান্তঘেঁষা। এখানে ত্রিপুরা আর খাসিয়া নৃ-গোষ্ঠীর বাস। এমনি প্রায় ৪০টি নৃ-গোষ্ঠী শ্রীমঙ্গলে বসবাস করছে। এরা কেউ পান চাষ করেন, কেউ লেবু কিংবা চা বাগানে কাজ করেন।
জানা যায়, সকল মায়ের মতোই নৃ-গোষ্ঠির মায়েদের স্বপ্ন- তাদের সন্তানেরা ভালো মানুষ হবে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ, ব্যবসায়ী কিংবা ডিসি হবে। তারা তাদের সন্তানদের জন্য আরো পরিশ্রম করতে চায়, চায় কাজের সুযোগ, হতে চায় অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। এই সকল মায়ের স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে আয় বৃদ্ধি করার মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নয়নের উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ বিনা খরচে বিদ্যাবিল ও হরিণছড়ায় নকশিকাঁথা তৈরির প্রশিক্ষণ প্রদান করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে তাদের বিনামূল্যে সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে। সমিতির মাধ্যমে তাদের তৈরিকৃত এই সব পণ্য বাজারজাত করার সুযোগ করে দিবে উপজেলা প্রশাসন। এই নকশিকাঁথায় তাদের গল্পগুলোই ফুটে উঠবে। উপজেলা প্রশাসনের প্রচেষ্টা আর প্রান্তিক এই মানুষগুলোর পরিশ্রম এক হয়ে নিশ্চয়ই একদিন সকল মায়ের স্বপ্ন পূরণ হবে।
মন্তব্য করুন