বরগুনার তালতলীতে তামাতু টিলায় একটি মুজিব কিল্লা নির্মাণ কাজ শেষ হলেও হস্তান্তরের আগেই ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিম্ন মানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় এ ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। এদিকে ভবন হস্তান্তর বা উদ্বোধন না হলেও গত বছরের ১৩ অক্টোবরে ভবনটি উদ্বোধন হয়েছে এমন সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছেন ঠিকাদার।
জানা গেছে, তালতলী, মালিপাড়া ও তুলাতলী এলাকায় একটি টিলা রয়েছে। সেটির নাম দেওয়া হয়েছে তামাতু টিলা। এখানে আপদকালীন আশ্রয়ণ কেন্দ্র (মুজিব কিল্লা) নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয়ের মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কার্যাদেশ পান পটুয়াখালীর সোনালী ট্রেডার্সের মালিক সঞ্জয় কুমার কর্মকার। প্রকল্পটি ঐ অর্থ বছরের ভেতরে নির্মাণ কাজ শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে তা ভেস্তে যায়। তবে হস্তান্তরের আগেই গত বছরের ১৩ অক্টোবরে ভবনটি উদ্বোধন হয়েছে এমন সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছেন ঠিকাদার। প্রকল্পে মাটির কাজ, ভবনের স্লোপ, ভিমের লিংটেন, ক্যাটল শেডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করা হলেও তা অত্যন্ত নিম্নমানের হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ফলে ভবনে স্লোপ, মূল ভিমের লিংটেন ও ক্যাটল শেডে ফাটল দেখা দিয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও মুজিব কিল্লা প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার সম্প্রতি প্রকল্পটি পরিদর্শনে গেলে আগেভাগেই ফাটলগুলো সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় বলে অভিযোগ আছে।
এদিকে ১৯৯৫ সালে উপজেলার তালতলী, মালিপাড়া ও তুলাতলী এ ৩ গ্রামের নিয়ে গঠিত হয়েছে তামাতু নামের টিলা। এটাও ভুল করে তারা নাম লিখেছেন তামাকুটিলা।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয়রা জানান, মুজিব কিল্লা নির্মানের সময় নিম্নমানের সমগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এ বিষয় আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে ঠিকাদারের লোকজন আমাদেরকে হুমকি দেয়। তারা বলেন আমাদের দেখার দরকার নেই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম লিটু বলেন, মুজিব কিল্লা ভবনের কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। নিম্নমানের মালামাল দিয়ে কাজ করানো হয়েছে। আমি একাধিকার তাদের বলতে গেলে তারা বলেন উন্নয়ন কাজে বাধা দিতে আসিয়েন না। এমন কি তার চাঁদাবাজি মামলা দেওয়ার হুমকি দেয় আমাকে।
এ বিষয় সোনালী ট্রেডার্সের মালিক সঞ্জয় কুমার কর্মকার বলেন, ভবনটি এখনও হস্তান্তর করা হয়নি। যে সব স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে সেগুলো সংস্কার করে ভবনটি হস্তান্তর করা হবে।
মুজিব কিল্লা প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার মো. শামছুদ্দোহা বলেন, ভবনের কিছু স্থানে ফাটল আছে। এটা ঠিকাদারকে একাধিক বার ঠিক করে দেওয়ার কথা বলেছি। কিন্তু তিনি ঠিক করে দিচ্ছেন না। ফাটলে সংস্কার না করা পর্যন্ত ঠিকাদারকে ফাইনাল বিল দেয়া হবেনা। আর আমরা ভবনটি বুঝেও নিবো না।
ভবন নির্মান কাজের পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুহিবুল ইসলাম জানান, এবিষয়েটি দেখভাল করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয়। আসলে আমাদের হাতে তেমন কিছু নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুম্পা বলেন, মুজিবকিল্লার ভবন আমাদের কাছে হস্তান্তর করেনি। ফাটল ভবন আমরা বুজে নিবো না। ফাইনাল বিল ধরে রাখা হয়েছে ভবন সংস্কার না করে দেয়া পর্যন্ত ফাইনাল বিল দেয়া হবেনা।