
কলাপাড়ায় নৌবাহিনীর নবীন নাবিকদের জন্য শুরু হলো আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ঘাঁটি বানৌজা শের-ই-বাংলা’র কার্যক্রম।
বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গনভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ ঘাঁটির কমিশনিং (উদ্বোধন) করেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নৌঘাঁটি বানৌজা শের-ই-বাংলা উপকূলীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার সঙ্গে দুর্যোগের সময় জনসাধারণের সুরক্ষা দেবে। দক্ষিণাঞ্চলের দুর্গম এলাকায় এই ঘাঁটি স্থাপনে একদিকে যেমন সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় নৌবাহিনীর অপারেশনাল কার্যক্রমের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে তেমনি দেশের সার্বভৌমত্ব ও চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য জাতির পিতা সশস্র বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। তিনি নিজের হাতে নৌ বাহিনী গঠন করেছিলেন। বিশ্ব মানের সশস্র বাহিনী গড়ে তুলতে সরকার কাজ করছে। সবচেয়ে বড় কথা আমরা আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে নিজেরাই যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।
নৌবাহিনী ঘাঁটি বানৌজা শেরেবাংলা এই জায়গাটায় আমরা সুনির্দিষ্ট করেছিলাম। এমন একটি নামে এই ঘাঁটিটা করেছি যার বাংলাদেশের জনগণের জন্য অনেক অবদান রয়েছে, যিনি শেরে বাংলা একে ফজলুল হক। তিনি এই ভূখন্ড থেকে জমিদারি কথা মুক্ত করে দিয়েছিলেন। বুধবার দুপুরে কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামে নৌবাহিনীর নাবিকদের জন্য আধুনিক সুবিধা সম্বলিত বানৌজা শের-ই-বাংলা উদ্বোধনের সময় এসব কথা বলেন তিনি।

এসময় ৪ টি পেট্রোল ক্রাফট স্কোয়াড্রোন ও ৪ টি যুদ্ধ জাহাজ উদ্বোধন করা হয়। খুলনা শীপইয়ার্ড লিমিটেড নির্মিত পেট্রোল ক্রাফট স্কোয়াড্রোন গুলো হলো শহীদ দৌলত, শহীদ ফরিদ, শহীদ মহিব্বুল্লাহ, শহীদ আখতার উদ্দিন। আর ৪ টি ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউটিলিটি (এলসিইউ) হলো বানৌজা ডলফিন, তিমি, টুনা ও পেঙ্গুইন।
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করার পর এসব জাহাজ আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুলনা শিপ ইয়ার্ড এক সময় যারা ক্ষমতায় ছিল বিএনপি এটা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা এত চমৎকার একটা জায়গা এত চমৎকার একটা প্রতিষ্ঠান নষ্ট হতে দিতে পারিনা। যখন ৯৬ সালে সরকার গঠন করি তখনই এই ঘাঁটিটা আমি নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেই। তাদের হাতে তুলে দেয়ার উদ্দেশ্য ছিলো আমরা নৌবাহিনীকে আরো শক্তিশালী করবো, নিজেদের যুদ্ধাহাজ নিজেরা তৈরি করব এবং সেটা আজ আমরা পেরেছি। তাই আমি নৌবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই।

স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭৪ সালে নৌবাহিনীর বৃহত্তর ঘাঁটি বানৌজা শাখা কমিশনিং করে শেখ মুজিব। দেশের সমুদ্র সীমাও ৭৪ সালে প্রনয়ন করা হয়। কিন্তু ৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা কেউই এভাবে কোন উদ্যোগী নেয়নি।
বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার যে অধিকার, সে অধিকার রক্ষা করার কোন ব্যবস্থাই নেইনি কেউ। মিয়ানমারের সাথে জাতির পিতা আলোচনা করে যে অংশটা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলো এটুকুই আমাদের ছিল, ভারতের সাথে আমাদের সমুদ্র সীমা নিয়ে যে বিভ্রাট ছিলো তা কেউই সমাধান করেনি।
২০০৮ সালে আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিশাল সমুদ্রসীমা অধিকার আদায়ে সক্ষম হই। নৌবাহিনিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। গত ১৪ বছরে বাহিনীগুলো যাতে আরো সক্ষমতা অর্জন করতে পারে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করছি। আমাদের সমুদ্র সম্পদ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে লাগানোর জন্য ব্লু-ইকনোমিক অর্থাৎ সুনীল অর্থনীতি সেটা আমরা গ্রহণ করেছি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বানৌজা শের-ই-বাংলা প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদা, বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর প্রধান এস.এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌ-বাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, বিমান বাহিনীর প্রধান শেখ আবদুল হান্নান ও পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলামসহ নৌবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকগন ও জেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।
নৌ-ঘাঁটি বানৌজা শের-ই-বাংলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী বানৌজা শের-ই-বাংলা ঘাঁটির নাম ফলক উন্মোচন করেন। আধুনিক সুবিধা সম্বলিত এ ঘাটিতে গড়ে তোলা হচ্ছে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত নবীন নাবিকদের প্রশিক্ষন কেন্দ্র।
অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে গড়ে তোলা হয়েছে প্রশাসনিক ভবন, এভিয়েশন সার্পোট ও হ্যাঙ্গার সুবিধা সম্বলিত মাল্টিপারপাস সেড, বিভিন্ন রিপেয়ার ও মেইন্টেন্যান্স ওয়ার্কশপ।
এছাড়াও থাকছে ঘাটিতে এভিয়েশন সুবিধা এবং ড্রাইভিং স্যালভেশন এর কমান্ডো পরিচালনা সম্বলিত ইউনিট, নৌ-বাহিনী স্কুল এ্যান্ড কলেজ, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। সম্পূর্ন দেশীয় প্রযুক্তিতে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিডেট নির্মিত ৪ টি পেট্রোল ক্রাফট নৌ-বহরে অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে দক্ষিনাঞ্চলের সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকার সুরক্ষা আরও সুদৃঢ় হবে।

এছাড়াও নবনির্মিত এলসিইউ সমূহ আশ্রয়ন-৩ প্রকল্পের আওতায় বলপূর্বক বাস্তচ্যুত মায়ানমার জনগোষ্ঠীকে চট্রগ্রাম হতে ভাসানচরে স্থানান্তর ও তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকবে। পাশাপাশি এলসিইউ সমূহ জাতিসংঘ, আন্তজার্তিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক বর্গকে সকল প্রকার সহায়তাসহ বলপূর্বক বাস্তচ্যুত মায়ানমার জনগোষ্ঠির বিভিন্ন কল্যানমূলক কার্মকান্ডে ব্যবহৃত হবে। নবনির্মিত এসকল জাহাজ ও ঘাটি কমিশনিংয়ের মাধ্যমে এ অঞ্চলে অবৈধ মৎস্য আহরন রোধ, চোরাচালান দমন, মানব পাচার রোধ, জলদস্যুতা এবং মাদক পাচার রোধসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাান্ড নিরসন কল্পে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে।
মন্তব্য করুন