এবারের ঈদুল আযহার ছুটিকে ঘিরে সপ্তাহজুরে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে হাজারো পর্যটক দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভীড় জমিয়েছে। ঈদের প্রথম দিন কম পর্যটকের সমাগম লক্ষ্য করা গেছে। তবে দ্বিতীয় দিন থেকে টানা চার দিন কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে তিল ধারনের ঠাই নেই।

অসংখ্য পর্যটকদের আগমনে সাগরকণ্যা কুয়াকাটা এখন মুখর। সূর্যোদয় সূর্যাস্তের এই বেলাভূমির সৌন্দর্য অবলোকনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে এসেছে হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসু মানুষ এবং দর্শনার্থীরা। সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে নেচে গেয়ে আনন্দ উচ্ছাসে মেতে ওঠে প্রকৃতি প্রেমী মানুষ গুলো। তবে এবারের ঈদের ছুটি কাটাতে পরিবার পরিজন নিয়ে আসা পর্যটকরা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতকেই বেছে নিয়েছেন ভ্রমনের জন্য। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দেশের এই অন্যতম সমুদ্র সৈকতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের সংখ্যা।

ইট পাথরের দালান কোঠা আর ব্যস্ত শহরের কোলাহল ছেড়ে একটু প্রশান্তির খোঁজে সবুজ অরন্য ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য অবলোকনে সমুদ্র সৈকতে ছুটে আসে নানা বয়সের হাজারো মানুষ। সমুদ্রের নির্মল বাতাস যেন প্রান ফিরিয়ে দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমের উত্তাল সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ মোহময় করে তুলছে পর্যটকদের। পরিবার পরিজন ও বন্ধুদের নিয়ে দলবেধেঁ সমুদ্রে গোসল, হই হুল্লোড়, ওয়াটার বাইক, স্পীড বোট, বীচ বাইক এবং মটরবাইক নিয়ে কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রাখাইন পল্লী, রাখাইন মার্কেটসহ দর্শনীয় স্পটগুলোতেও ভীড় দেখা গেছে চোখে পড়ার মত। সৈকতের বালিয়াড়ীতে গা ভাসিয়ে দিয়ে উপভোগ করছেন প্রকৃতি ও পরিবেশ। ঢেউয়ের গর্জন এবং খড়শ্রোতকে উপেক্ষা করে কপোত কপোতি বয়বৃদ্ধ থেকে শুরু করে শিশুরা ঝাপিয়ে পড়ছেন সমুদ্রে। কেউ কেউ বেঞ্চিতে বসে দর্শন করছেন সাগরের বিশালতা। তবে এবারের ঈদের ছুটিতে শহর থেকে বাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে আসা আশপাশের জেলা থেকে আগত দর্শনার্থীদের সংখ্যাই বেশি বলে দাবী পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। আবাসিক হোটেল গুলোর ৭০- ৮০ ভাগ বুকিং রয়েছে। তবে নিন্ম শ্রেনীর হোটেল গুলোর বেশিরভাগ কক্ষই খালি রয়েছে এমনটাই দাবী হোটেল মোটেল মালিকদের। ব্যবসায়িরা বলেন, আগত পর্যটকদের বেশিরভাগই সমুদ্র দর্শন শেষে দিনে দিনেই ফিরে যাচ্ছেন নিজ গন্তব্যে।

ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থেকে আসা পর্যটক নাজমা নাহার বলেন, সাগরকণ্যা নামে খ্যাত এই কুয়াকাটা সৈকতে ভ্রমণে এসে খুবই ভালো লেগেছে তাদের। পরিবারসহ তারা এবার ঈদের ছুটি কাটাতে কুয়াকাটা এসেছেন। প্রশান্তির পাশাপাশি শহরের এক ঘেয়েমি জীবনে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পেরে খুশি তারা। অতীতের তুলনায় এখনকার এ সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ তাদেরকে আকৃষ্ট করেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সেবায় মুগ্ধ পর্যটকরা এমনটাই জানিয়েছেন। সূর্যোদয় সূর্যাস্তের মত বিরল দৃশ্য অবলোকন করতে পেরে বিমোহিত পর্যটক দর্শনার্থীরা।

ঈদুল আজহার ৫ দিনের ছুটিকে ঘিরে বেচাকেনার ধুম পরেছে পর্যটন নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোতে। পদ্মা সেতুর কারনে তাদের এই সুদিন ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কুয়াকাটা সৈকত এলাকার শুটকি ব্যবসায়ী মোঃ নাইমুর রহমান (রুবেল) বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে তাদের ব্যবসা ভালো চলছে। বেচাকেনাও ভালো হয়েছে। আমরা এতে খুবই খুশি। তবে এবারের কোরবানির ঈদে অসংখ্য পর্যটকের আগমন হলেও তাদের তুলনামূলক বেচা বিক্রি হয়নি।

কুয়াকাটা সী ক্রাউন আবাসিক হোটেলের মোঃ মামুন বলেন, কুয়াকাটায় প্রচুর পরিমান পর্যটক আসলেও তার বেশিরভাগই দিনে এসে দিনেই ফিরে যাচ্ছে। তাদের হোটেলের কক্ষ ৫০ ভাগ খালি রয়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিওনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ আবুল কালাম আজাদ জানান, কুয়াকাটায় আগত বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবার মান্নোয়নে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। ৩০ কিলোমিটার সৈকত জুড়ে নিরাপত্তা বলয় তৈরী করা হয়েছে। পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে এবং দর্শনীয় স্পট গুলো ঘুরে বেড়াতে পারে তার সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।