‘বই পড়া মানুষকে আলোকিত করে’-এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল ‘বই পড়া প্রতিযোগিতা ২০২৫’। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিনের মূল ভাবনায় আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় উপজেলার ৩৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-যার মধ্যে রয়েছে চারটি কলেজ, চারটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পাঁচটি মাদ্রাসা এবং ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় তিন ধাপে- প্রথম পর্ব ‘মুকুল’, দ্বিতীয় পর্ব ‘ফুল’ এবং চূড়ান্ত পর্ব ‘ফল’। এই ধাপে ৩৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ২০ হাজার ২১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। সেখান থেকে ৯৮২ জন প্রতিযোগী দ্বিতীয় ধাপের জন্য নির্বাচিত হয়।

এই পর্বে শিক্ষার্থীরা যে বইগুলো পড়েছে, তার মধ্যে ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলেবেলা, কাবুলিওয়ালা, ছুটি, হৈমন্তী, দেনাপাওনা, সৈয়দ মুজতবা আলীর চাচা কাহিনী, দেশে বিদেশে, বেগম রোকেয়ার মতিচুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নারীর মূল্য, লালু, অদ্বৈত মল্লবর্মণের তিতাস একটি নদীর নাম, এছাড়াও তিতাস, আংকেল টমস কেবিন, আল কেমিস্ট, ছাড়পত্র, বিষাদ সিন্ধু, খোয়াবনামাসহ মোট ৬২টি বই অন্তর্ভুক্ত ছিল।

‘মুকুল’ পর্বে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের লটারির মাধ্যমে বই নির্ধারণ করা হয়। এরপর ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর উপজেলার ৩৬টি প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয় ‘ফুল’ পর্বের মৌখিক পরীক্ষা। ১৪ জন পরীক্ষক আলাদা আলাদা ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় গিয়ে পরীক্ষা নেন।
এই পর্বে ২৯টি বই নির্ধারিত ছিল। সেখান থেকে ৩৬৭ জন শিক্ষার্থী চূড়ান্ত ধাপের জন্য নির্বাচিত হয়।

২০ সেপ্টেম্বর শনিবার, ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে চূড়ান্ত ধাপ ‘ফল’ অনুষ্ঠিত হয়। চৌদ্দটি কক্ষে একযোগে অনুষ্ঠিত হয় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা। এতে অংশ নেয় ৩৪৩ জন প্রতিযোগী। প্রতিটি বিভাগ (ক, খ, গ) থেকে প্রথম ১০ জন করে মোট ৩০ জনকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।


পুরো প্রতিযোগিতায় সমন্বয় সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে ‘শ্রীমঙ্গল আবৃত্তি উৎসব’। প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ও নির্বাহী পরিচালক দেবাশীষ দাশ, সহযোগী হিসেবে ছিলেন লিয়েন বণিক শ্রæতি ও অপরাজিতা বর্ধন অপি। পাঠ সহযোগী হিসেবে ছিল শ্রীমঙ্গলের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘উত্তরণ’।

শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি।

‘শিক্ষার্থীদের বই পড়ায় আগ্রহী করে তুলতেই এই আয়োজন’- বললে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন।
তিনি আরও জানান, “ভবিষ্যতেও এই উদ্যোগ ধারাবাহিকভাবে চলবে, যাতে শ্রীমঙ্গলের শিক্ষার্থীরা বইয়ের আলোয় নিজেদের গড়ে তুলতে পারে। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল নৃত্য, নৃ-তাত্বিক জনগোষ্টির সংস্কৃতি আলোকে নৃত্য ও স্থাণীয় শিল্পীরা সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ৫ শতাধিক দর্শককে বিমোহিত করে রাখে।