
পটুয়াখালীর আমতলীতে নবজাতক কন্যাশিশুকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে যাত্রীবাহী বাসের চাপায় মা, নানা ও দাদি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নবজাতক শিশুসহ আরও তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন শিশুটির মা মোছাদ্দেকা বেগম (২৪), নানা মৌলভী আজিজুল হক (৬৫) ও দাদি খালেদা বেগম (৫০)।
শনিবার (২১ জুন) দুপুরে আমতলী-পটুয়াখালী মহাসড়কের কেওয়াবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। পটুয়াখালীগামী একটি ইজিবাইকে করে শিশুটির পরিবার গলাচিপা উপজেলার বলইবুনিয়া গ্রাম থেকে পটুয়াখালী শহরে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছিল। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা কুয়াকাটাগামী ‘ইকরা লাক্সারি পরিবহন’ নামের একটি যাত্রীবাহী বাস (ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৮৯৫৩) ইজিবাইকটিকে চাপা দিলে ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
প্রচণ্ড ধাক্কায় ইজিবাইকটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং রাস্তায় ছিটকে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান শিশুটির নানা ও দাদি। গুরুতর আহত অবস্থায় নবজাতক, তার মা মোছাদ্দেকা বেগম, বাবা মাওলানা জাহিদুল ইসলাম, দাদা মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস ও চালক ওহাব গাজীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোছাদ্দেকা বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন।
নবজাতক শিশুটিকে হাসপাতালের বিশেষ নবজাতক ইউনিটে (SCANU) ভর্তি করা হয়েছে। আহত বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। বাসটির ধাক্কায় শিশুটির বাবা, দাদা ও ইজিবাইক চালক গুরুতর আহত হয়ে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নিহত মৌলভী আজিজুল হকের বাড়ি আমতলী উপজেলার পশ্চিম সোনাখালী গ্রামে। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে ছুটে আসে আমতলী থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়, যেখানে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাশেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাহেল হাওলাদার ও মোহদী হাসান জানান, বাসটি খুব দ্রুতগতিতে আসছিল এবং ইজিবাইকটিকে সরাসরি ধাক্কা দেয়। তারা বলেন, ইজিবাইকের যাত্রীরা ছিটকে পড়ে যান, ঘটনাস্থলেই একজন নারী ও একজন পুরুষ মারা যান এবং নবজাতকসহ আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শিশুটির বাবা মাওলানা জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা আমাদের নবজাতক মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে পটুয়াখালী যাচ্ছিলাম। সঙ্গে আমার স্ত্রী, শ্বশুর, দাদি এবং অন্যরা ছিলেন। বাসটি আমাদের ইজিবাইকের ওপর উঠে যায়। ঘটনাস্থলে আমার শ্বশুর ও দাদি মারা যান। হাসপাতালে আমার স্ত্রীও মারা গেল। আমার শিশু কন্যাও আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।”
আমতলী থানার ওসি মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসটিকে জব্দ করেছে। তবে চালক ও সহকারী পালিয়ে গেছেন। তাদের শনাক্ত ও আটকের চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য করুন