কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার নাজিমখাঁন ইউনিয়নে এক ইউপি সদস্যের যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এক নারীর সঙ্গে সেই ইউপি সদস্যের অন্তরঙ্গতার ভিডিওটি যেনো বিদেশি নীল ছবিকেও হার মানিয়েছে। এলাকার শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে যুবক-বৃদ্ধদের মোবাইলে মোবাইলে ঘুরছে সেই অবৈধ যৌনতার ভিডিওটি। এ প্রতিবেদকের হাতেও পৌঁছেছে সেই ভিডিও। হাটে-মাঠে-ঘাটে এই নিয়ে চলছে রগরগে আলোচনা। এর ফলে চরম নৈতিক অবক্ষয়ের মুখে পড়েছে এলাকার সমাজ ব্যবস্থা।

এলাকাবাসী জানায়, এই ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার কারণে নিজের সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত তারা। স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মোবাইলেও ঘুরছে সেই ভিডিও। ফলে সন্তানদের সামনে চলাফেরা করতে নিজেরা লজ্জায় পড়ছে তারা। এই পরিস্থিতিতে অভিযুক্ত ইউপি সদস্যকে বরখাস্ত করার দাবি জানান স্থানীয়রা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্থানীয় বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতেও লজ্জা করে। আমরা বাবা-মা, ছেলেমেয়ে ও আত্মীয়-পরিজন নিয়ে অনেকটা রক্ষণশীল সমাজে বাস করি। এই ভিডিওটি সবার মোবাইলে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা এখন লজ্জায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারছি না। আমরা যাকে ভোট দিয়ে আমাদের নেতা বানিয়েছি তার এমন ন্যাক্কারজনক কাণ্ডে আমরা বিব্রত। আমরা অবিলম্বে তাকে বরখাস্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’

জানা যায়, অভিযুক্ত ইউপি সদস্যের নাম নাজির হোসেন ওরফে লাল মিয়া । তিনি নাজিমখাঁন ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। তার সঙ্গে যে নারীকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা গেছে তার পরিচয় নিশ্চিত করতে পারছে না কেউ। তবে এলাকার দুই নারীকে ঘিরে আলোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে। কিন্তু সেই ইউপি সদস্য লাজ-লজ্জাহীনভাবে এলাকায় বীরদর্পে ঘুরে বেরাচ্ছেন।

বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য নাজির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্থানীয় দুই সাংবাদিককে মামা বলে পরিচয় দেন এ প্রতিবেদকের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। থানায় মামলা করেছি। পুলিশ তদন্ত করছে।’ এরপর তিনি মুঠোফোনের সংযোগটি কেটে দেন। পরে আরো একাধিকবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে রাজারহাট থানার এসআই শাকিলের (নাজিমখাঁন ইউনিয়নের বীট ইনচার্জ) যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ইস্যুতে রাজারহাট থানায় কোনো মামলা হয়নি।’

সরকার বিটিআরসির মাধ্যমে সমস্ত পর্ন ওয়েসাইটের লিংক ব্লক করে দিয়েছে। দেশের নাগরিকরা যেনো এসব কুরুচিপূর্ণ নীল ছবি দেখতে না পারে। এমনকি কেউ দেখলে আইনে শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে। সেখানে আপনার ইউনিয়নে আপনার পরিষদের একজন সদস্যের অবৈধ যৌন ভিডিও সকলের হাতে হাতে। এ বিষয়ে আপনি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন- নাজিমখাঁন ইউপি চেয়ারম্যান মালেক পাটোয়ারী নয়া উত্তরে বলেন, ‘বিষয়টি আমি বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে শুনেছি, কিন্তু ভিডিওটি দেখিনি। এটাও শুনেছি, ভিডিওর সত্যতা নিশ্চিত করতে ইউপি সদস্য নাকি সাইবার অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি।’

এমন ঘটনায় এলাকার যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার শঙ্কা আছে। পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ হিল জামান বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। তবে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে ঠিক একই রকম বক্তব্য দেন রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরে তাসনিম। তিনি বলেন, ‘এ রকম ঘটনা অফিশিয়ালি কেউ জানায়নি। এ বিষয়ে কেউ জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।