চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি করেন।

তিনি বলেন, এটা গণতন্ত্রের সবচেয়ে ইম্পোর্টেন্ট বিষয়। সেক্ষেত্রে আমরা মনে করি, এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। এ কারণে আমরা সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যেন আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।

এর আগে, ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের প্রথম দিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এদিকে, বিএনপির ওই সংবাদ সম্মেলনের পরে দুপুরেই আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ। এ সময় বিএনপি আগস্টে নির্বাচনের দাবি নিয়ে করা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে আখতার আহমেদ প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়ের কথাই জানান।

তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে আমার কোনো মতামত দেওয়ার সুযোগ নেই। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আমাদের প্রস্তুতিটা হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় যে উইনডোটা দিয়েছেন সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।

নির্বাচনের জন্য তারা সরকারকে কোনো চাপ দিচ্ছেন না জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার করেও নির্বাচন করা সম্ভব এবং সেটা দ্রুতই সম্ভব। এজন্য আমরা কোনো চাপ দিচ্ছি না। একটা গ্রহণযোগ্য, কোয়ালিটি নির্বাচন করার জন্য যা যা করা দরকার সেগুলো আমরা বলব। সরকার নির্বাচনের যে সময় জানিয়েছে তাতে কোনো সমস্যা ছিল না বলে মনে করেন তিনি।

যে কারণে আগস্টেই নির্বাচন চায় বিএনপি-
সোমবার রাতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত জানাতেই মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। স্থায়ী কমিটির সভায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার যে বক্তব্য ছিল, এই বছরের শেষের দিকে অথবা পরবর্তী বছরের অর্থাৎ ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে … এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে গতকাল দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি, এত বিলম্বিত করার কোনো কারণ নেই।

তিনি বলেছেন, নির্বাচন সংস্কার সংক্রান্ত যে কমিটি এটার রিপোর্ট এসে যাবে কালকে। সুতরাং আমার মনে হয় না যে এটা আরও বিলম্বিত করার কোনো প্রয়োজন আছে। কারণ যত বিলম্ব হচ্ছে তাতে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে। বারবার করে বলছি আসলে নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই।

নির্বাচন গণতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে এ বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।

তবে এদিকে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নতুন সংবিধান রচনা করার পর নির্বাচন চায় চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার এলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে, ভারতের সেনাপ্রধানের এমন বক্তব্যের পরদিনই বিএনপির দ্রুত নির্বাচনের দাবি একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ।

তিনি বলেন, ভারতও চাপ দিচ্ছে যে বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন দরকার। সংস্কার ছাড়াই। আজকে হঠাৎ করে বিএনপি ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন চাচ্ছে, এতোদিন যাবৎ ২০২৫ সালের মধ্যে দিতে বলছে। এই দুটোর মধ্যে একটা যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছি। ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিএনপি এটা চাচ্ছে।

ভবিষ্যতে আর কোনো ফ্যাসিস্ট যাতে আসতে না পারে সেরকম নিশ্চিত সংস্কার করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে বলে মনে করেন এই সমন্বয়ক।

হান্নান মাসউদ বলেন, নতুন একটি গণপরিষদ ও নতুন সংবিধান রচনার মাধ্যমেই সম্ভব বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিস্ট আসবে না এটা নিশ্চিত করা সম্ভব। একইসঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।

তিনি বলছেন, বিএনপি চাচ্ছে ক্ষমতায় এসে নিজেদের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেবে। এটাকে কুক্ষিগত করার প্রচেষ্টায় আছে। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিতে হবে। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করেই জাতীয় নির্বাচন বা গণপরিষদ নির্বাচনের দিকে এগোনো যায়।

সূত্র: বিবিসি বাংলা