পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে প্রকৃত জেলেদের বাদ দিয়ে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের উপকরণ বকনা গরু বিতরণে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন খান এর বিরুদ্ধে ঘুষ বানিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়মের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (২২ মে) সকাল সাড়ে দশটায় উপজেলার মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের ভয়াং বাজার সংলগ্ন পায়রা নদীর তীরে ওই ইউনিয়নের প্রকৃত মৎস্যজীবীরা এ মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে জেলে তোতা হাওলাদার, ওয়ারেচ হাওলাদার, মো. সোরাফ হাওলাদার বক্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, ‘উপজেলা মৎস্য অফিসার মোসলেম উদ্দিন খান গরু (বকনা গরু) দেয়ার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে ১ হাজার করে টাকা নেন। পরে প্রত্যেকের কাছে আরও ৫ হাজার টাকা করে দাবি করেন। সেই টাকা না দেয়ায় আমাদেরকে গরু (বকনা গরু) দেয়নি আর টাকাও ফেরত দেয়নি। কিন্তু জেলেদের গরু না দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আলম খান ও কালাম খান (কৃষিকাজ), সালাম হাওলাদার (১০ বছর যাবৎ ঢাকায় দারোয়ানের কাজ করেন) ও বজলু আকন (ফলের দোকান), পান্না গাজী (চায়ের দোকান) সহ অন্যান্যদের গরু দিয়েছেন, যাদেরকে গরু দিয়েছেন তারা কেউই জেলে না। অথচ আমরা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করি। বর্তমানে মাছ ধরায় সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছি।’

তারা আরো বলেন, “উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন খান ভয়াং বাজারে আসলে প্রতিবার আমাদের কাছ থেকে মোটরসাইকেলের তেল খরচ নিতেন আর বলতেন তোমাদের কাজেই তো আসি”। এমনকি তিনি দুপুরে হোটেলে খাবার খেলে সেই বিলও জেলেদের দিতে হয়।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে মোট তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা ২ হাজার ২শ’ ৫০ জন। গত ১১ই মে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে মির্জাগঞ্জে ৫০ জন জেলের মাঝে বকনা গরু বিতরণ করে উপজেলা মৎস্য বিভাগ।

ইলিশের প্রজনন, বেড়ে ওঠা ও উৎপাদন বাড়াতে নিষেধাজ্ঞার সময় প্রতিটি জেলে পরিবারকে প্রণোদনা হিসেবে মৎস্য বিভাগ জেলেদের মাঝে বিনামূল্যে বকনা গরু বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রতিটি গরুর জন্য সরকারি বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার টাকা।
উপকারভোগী মো. আশ্রাফ আলী ও মো. নাসির সিকদার বলেন, আমরা সরকারের দেয়া বকনা গরু পেয়েছি। গরু নিতে আমাদের ৫০ জনকে চুক্তিপত্রের জন্য মৎস্য অফিসারকে ১ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোসলেম উদ্দিন খান বলেন, যাচাই-বাছাই করে যাদের জেলে কার্ড আছে তাদেরকেই গরু দেয়া হয়েছে। জেলেদের কাছ থেকে কোনো টাকা পয়সা নেয়া হয়নি।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, বকনা গরু বিতরণে কোনো অনিয়ম হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।