
কলাপাড়ার লতাচাপলী ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪৫ নম্বর ঘরের বাসিন্দা মোসাম্মৎ সাথী বেগম বলছিলেন, আগে ঘর ছিল না, মানুষের বাড়ি বাড়িতে থাকতাম। শেষ বয়সে কই থাকমু, এইডা লইয়া সব সময় চিন্তা করতাম। সরকারি পাকা ঘর পাইয়া সব চিন্তা শেষ হইছিল। আমাগো মতো ঘরহারা মানুষের খুশির সীমা ছিল না। ওই ঘরই অহন বড় দুশ্চিন্তার কারণ হইয়া দাঁড়াইছে। ঘরগুলোর ফ্লোর ও রং উঠে গেছে। আছে সুপেয় পানির সংকট। দেওয়ালের বালু আগলা হইয়া পইরা যাইতাছে। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। টিন দিয়ে পানি পড়ে, ঘরের দরজা-জানলা ভাঙ্গা. রাস্তায় পানি জমে থাকে। এমন দূরবস্থা ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের।
কলাপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে জমি ও ঘর দেওয়ার কাজ শুরু এর অংশ হিসেবে ২০২০- ২৩ অর্থবছরে অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ ২-এর আওতায় এ উপজেলায় নয়াপাড়া এলাকা ৬৪টি ভূমিহীন পরিবারকে ২ শতাংশ খাসজমি বন্দোবস্ত দিয়ে একটি করে সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ শত টাকা। প্রকল্পের অধীনে নির্মাণাধীন কাজের দেখভাল করছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্র ও বসবাসরত পরিবারগুলোর অভিযোগ, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় অনেক ঘরের ফ্লোরের প্লাস্টার ও রং এখনই উঠে যাচ্ছে। অপর দিকে অনেকে ঘরে ওঠার সময়ই ঘরের দরজা জানালা ভাঙা ছিল। সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘরগুলোর সুপেয় পানির সংকট, বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই পানি চলে আসা, ঘরগুলোর ফ্লর ও রং উঠে গেছে, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, রাস্তা ও শৌচাগার গুলোর দুরবস্থা।
বাসিন্দাদের কেউ ভালো নেই। সবার ঘরে কিছু না কিছু সমস্যা আছেই। তাঁদের ভাষ্য, ঘর পাকা হলেও ভয় নিয়ে বসবাস করতে হয়। অল্প টাকায় বারান্দাসহ তিন কক্ষের ঘর বানানো হয়েছে। কাজ হয়েছে একেবারে নিম্ন মানের। দেওয়া হয়নি পরিমাণ মতো সিমেন্ট, এ কারনে এখন ঘরের ফ্লর প্লাষ্টার উঠে যাচ্ছে। ঘর হস্তান্তরের সময় রং করে চাকচিক্য দেখানো হয়েছিল। পাঁচ বছর টিকবে কি না সন্দেহ। রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের তত্বাবধানে একটি ঘরের জন্য দুই লাখ ৮৪ হাজার ৫০০শত টাকা বরাদ্দে এসব ঘর নির্মাণ করা হয়।
গত ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব ঘর উদ্বোধন করেন। এর পর উপকারভোগীরা সেখানে বসবাস শুরু করেন। বর্ষা আসার আগেই অধিকাংশ ঘরের ছাদ থেকে পানি পড়া শুরু করেছে। উদ্বোধনের দুই মাস অতিবাহিত হলেও ওই সব পরিবারের জন্য পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়নি। নয়াপাড়া গ্রামে মুজিব শতবর্ষের ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা। ভূমিহীন ও গ্রহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলো উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। নয়াপাড়া এলাকার ৬৪টি ঘর নির্মাণে রয়েছে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এসেছে।
৪৫ নম্বর ঘরের বসবাস করা মোসাম্মৎ সাথী বলেন, আমরা ঘরে ওঠার সময় পেছনের একটা দরজা ও সামনের একটি জানালা ভাঙা পাই। পেছনের জানালার একটি পার্ট ছিলই না। এর পর পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা হয়নি। ফলে দুর্ভোগের শেষ নেই।
৪৭ নম্বর ঘরের তারেক হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পেয়ে আমরা খুবই খুশি, কিন্তু ঘর নির্মাণের সাথে যারা জড়িত তারা নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করায় আমরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছি। প্রধানমন্ত্রীর সুনাম ক্ষুন্ন করছেন তারা।
৫৯ নম্বর ঘরের লাল বরু বলেন, ঘর পেয়ে প্রধনমন্ত্রীর জন্য দোয়া করি। তবে আমরা ঘর পেয়েছি সত্য, কিন্তু এখন পর্যন্ত পানি ও বিদ্যুৎ পাইনি। পানি ও বিদ্যুতের কারণে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে।
২৩ নম্বর ঘরের মোহাম্মদ ছিদ্দিক বলেন, থাকার ঘর হয়েছে কিন্তু পানি ও বিদ্যুৎ পাইনি। বৃষ্টি হতে না হতেই চলাচলের পথে পানি জমে যাচ্ছে।
লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, ঘরে যে সব ক্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে সেসব ঠিক করার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। কলাপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা (পিআইও) হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা জানতে পেরেছি কিছু ঘরের কাজে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে। সেটা দু-দিন ধরে কাজ চলতেছে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নয়াপাড়ার কাজের সময় যদিও আমি ছিলামনা, তারপরও যতটুকু ত্রুটি রয়েছে তা ঠিক করে দেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। আর পানির জন্য টিউবওয়েলের বরাদ্দ হয়েছে, ব্যবস্থা হয়ে যাবে। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে, তারাও সংযোগ দিয়ে দেবে।
মন্তব্য করুন