
কলাপাড়ায় উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও নব-নির্বাচিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনা পারভীন সীমা শনিবার দুপুর ১ টার দিকে পৌরশহরের নতুন বাজার এলাকার তাঁর বাসভবনে এক সংবাদ সন্মেলন করেছে। সামান্য একটি ঘটনাকে আওয়ামীলীগের কার্যালয় ভাংগার নাটক সাজানোর প্রতিবাদে এ সংবাদ সন্মেলন করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার পিতা মরহুম আনোয়ার-উল- ইসলাম পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে বার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। আমার বড় ভাই আবদুল্লাহ আল-ইসলাম লিটন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, আমার এক চাচাত ভাই নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। আমাদের গোটা পরিবার আওয়ামীগের জন্য নিবেদিত। অথচ, রহমান তালুকদার এক সময় বি,এন,পি, জাতীয় পার্টি করা মানুষ। যিনি সামান্য ঘটনাকে তিলে তাল বানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে সংবাদ সন্মেলনে তিনি উল্লেখ করে বলেন, তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পুন:রায় বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর নীলগঞ্জ ইউনিয়নে ৯ জুন ভোটারদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা পৌঁছামাত্র আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে অবস্থানরত রহমান তালুকদার কার্যালয়টি তালাবদ্ধ করে দেয়। এবিষয় নিয়ে তার সাথে শাহীনা পারভীন সীমার সর্মথকদের বাক-বিতন্ডা হয়। পরে বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আওয়ামীলীগ কার্যালয় ভাংচুরের মিথ্যা নাটক সাজিয়ে আমাদের আওয়ামীলীগ থেকে বিতারনের পায়তারা করা হচ্ছে।
ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনা পারভীন আরো বলেন, ওইদিন ঘটনার পরপরই আমি থানায় গিয়ে বসে থাকার পরেও তিনি (ওসি) কোনো রকম সৌজন্যতা দেখাননি। সেদিন আমি থানায় কর্তব্যরত কর্মকর্তা গোলাম মাওলার কাছে নজরুল খন্দকারকে তুলে আনার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, পাখিমারায় আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং আবদুর রহমান তালুকদারের বাসায় ভাঙচুর হয়েছে। নজরুল সেই মামলার আসামী। ওই সময় রাত সোয়া একটা বাজে। অথচ তখন পর্যন্ত থানায় এ ঘটনায় কোনো এজাহার দাখিল হয়নি। কিন্তু দু:খজনক হলো নজরুলকে আগেভাগেই আসামী হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে।
স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, গত ১২ জুন নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা বাজারে শাহিনা পারভীন তাঁর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে ভাঙচুরের সাঁজানো ঘটনা ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করার কর্মসূচি পালন করতে পাখিমারা বাজারে উপস্থিত হয়। এসময় আবদুর রহমান তালুকদার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে তার অনুসারীদের এনে পাখিমারা বাজার এলাকায় জড়ো করেন। তাঁদের পাল্টা আয়োজন দেখে শাহিনা পারভীন সীমা পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি স্থগিত করে চলে যায়। কিন্তু ভাইস চেয়ারম্যান কর্মসূচি স্থগিত করলেও আবদুর রহমান তালুকদারের লোকজন তাঁর চাচাত ভাই আলাউদ্দিন মিয়ার পরিচালিত বাস কাউন্টার ও তাঁর বাসায় হামলা চালিয়ে মহিলাদের মারধর ও শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে।
আবদুর রহমান তালুকদারের কাছে এনিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে ওই দিন নারী ভাইস চেয়ারম্যানের কর্মী-সমর্থকরা উদ্দেশ্য নিয়েই ঝগড়া বাজিয়েছে। তাঁর সাথে থাকা লোকজন আমার উপস্থিতিতে আমার ছোট ছেলেসহ কয়েকজনকে মারধর করেছে। এক পর্যায়ে দলীয় কার্যালয়ের চেয়ার ভাঙচুর করেছে। এরপর আমার বাড়িতে গিয়ে ওইসব লোকজন হামলা চালিয়েছে।
এদিকে দলীয় কার্যালয় ভাংগার বিষয় নীলগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক জগৎ জীবন রায় জানান, দলীয় কার্যালয় খোলা কিংবা বন্ধ নিয়ে দুপক্ষের বাক-বিতন্ডা, চর-থাপ্পর দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। অফিস ভাংগার কোন ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব তালুকদার এ প্রসংগে বলেন, এ ঘটনার পর উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি তদন্ত দলের প্রধান হিসেবে অপর সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সবকিছু যাচাই করেছি। দলীয় কার্যালয়ের সামনে যা ঘটেছে, তার সত্যতা পেয়েছি। তবে আবদুর রহমান তালুকদারের বাড়িতে যে হামলার কথা বলা হয়েছে, তা স্থানীয়দের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। স্থানীয়রা এরকম ঘটনা দেখেনি বলে জানিয়েছে। আমরা দলগতভাবে বিষয়টি দেখতেছি।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহমেদ বলেন, নারী ভাইস চেয়ারম্যান তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে যে শঙ্কিত, তা তিনি আমাদের জানাননি। আমরা তো দেখছি তিনি স্বাভাবিকভাবে সব কার্যক্রম করছেন। তবে ওই দিনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত একজনকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন