বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্খা সেটা তারা (সরকার) উপলব্ধি করে না। এই সরকার মুখে বলে, তারা স্বাধীনতা পক্ষের শক্তি। তারা যদি স্বাধীনতা পক্ষের শক্তি হত, তাহলে কেন তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। কেন তারা বাংলাদেশে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে, কেন তারা বাংলাদেশে বাকশাল কায়েম করেছে। এটাতো আমাদের কথা নয়, সারা বিশ্ব এখন এই কথাগুলো বলছে। কাজেই সরকারকে বুঝতে হবে ক্ষমতার জোরে, বুলেটের জোরে, বন্দুকের জোরে, টিয়ার গ্যাস দিয়ে গ্রেনেড মেরে হয়তো বিরোধীদলের মুখ স্তব্ধ করে রাখার প্রয়াস নেয়া যেতে পারে, কিন্তু তাদের দুর্দশা সফল হবে না।

রোববার (৩১মার্চ) দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুরে নাশকতা ও ভাঙচুর মামলার গ্রেফতার হয়ে কাশিমপুর কারাগারে মৃত্যুবরণ করা বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান খান হিরার স্বজনদের শান্তনা দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আসাদুজ্জামান খান হিরা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়ন বিএনপির ৬নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এসময় তিনি কারাগারে মৃত্যুবরণ করা বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান খান হিরার কবর জিয়ারত করেন। এরপর তিনি নিহতের পরিবারের সদস্যদের সাথে কুশল বিনিময় করেন এবং ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

তিনি বলেন, আজকে আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিএনপি রাজনীতি করে না। আমরা চাই বাংলাদেশে মানুষের অধিকার ফিরে আসুক। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরে আসুক। মানবাধিকার ফিরে আসুক। নারীর অধিকার ফিরে আসুক। শিশুর অধিকার ফিরে আসুক। এটাই হচ্ছে বিএনপি’র প্রত্যাশা।

তিনি আরও বলেন, ৭ই জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন ছিল, সেই নির্বাচনকে বর্জন করার জন্য কোটি কোটি মানুষ এবং ভোটারদের অনুরোধ করেছিলাম। তারা যেন এই নির্বাচন বর্জন করে। তার ফলশ্রুতিতে সরকার দিশেহারা হয়ে যায়। দিশেহারা হয়ে তারা রাজধানীতে বিএনপির মহাসচিব থেকে শুরু করে বড়বড় নেতাই নয়, আমাদের সারা বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে, জেলায়-উপজেলায় আমাদের যত নেতাকর্মী আছে তাদের উপর জুলুম নির্যাতন করে। মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে নিয়ে যায়। জেলের ভেতরে দুঃসহ নির্যাতনের ফলশ্রুতিতে আসাদুজ্জামান খান হিরার জীবনাবসান ঘটে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব গ্রামেগঞ্জে প্রতিটি নির্যাতিত নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন, সহানুভূতি জানাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, ১৯৫২ সালে আজকে থেকে ৭৫ বছর আগে এই বাংলাদেশের মানুষ তাদের মুখের ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বুকের রক্ত দিয়েছিল। তারা স্বাধীনতা চায়, কথা বলতে চায়, ভোট দিতে চায়, গণতন্ত্র চায়। কাজেই আজকে, এই পরিস্থিতিতে আমাদের একটি কথা, একটি মাত্র দাবি। সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী আওয়ামীলীগের মতো লগি বৈঠার রাজনীতি বিএনপি করে না। বিএনপি জনগণের জন্য রাজনীতি করে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাজনীতি করে, ক্ষমতায় যাবার জন্য নয়। কাজেই আজকে আমরা সেই আন্দোলন করেছি, সারা বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ আমাদের সেই আন্দোলনের সাড়া দিয়ে এই সরকারকে চলে যেতে বলেছে। এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে। আজ হোক বা কাল হোক, এই দেশে গণমানুষের সত্যিকার সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিবে আমাদের বিএনপি।

শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শুধু নয়, সম্মুখ সমরে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন শেষ যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন এবং বীর উত্তম খেতাব পেয়েছিলেন। কাজেই তিনি আমাদের জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি বলেছেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। আমরা দেশের আদর্শে দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার দিকনির্দেশনায় এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের কর্মসূচি অনুসরণ করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো- ইনশাআল্লাহ্।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডাঃ রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আক্তারুল আলম মাষ্টার, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ডা: মো. শফিকুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আব্দুল মোতালিব, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক, জেলা বিএনপি’র সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান খান টিটু, কাওরাইদ ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি এমদাদ মোড়ল, উপজেলা বিএনপির সদস্য মোক্তারুল করিম শামীম, সাইফুল হক মোল্লা, আবুল হোসেন প্রধানসহ বিএনপি’র অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে গিয়েছিলেন হিরা খান। সমাবেশ থেকে ফেরার সময় সন্ধ্যায় শ্রীপুর রেল স্টেশন এলাকা থেকে আটক করে শ্রীপুর থানা পুলিশ। পরে শ্রীপুর থানার নাশকতা ও ভাঙচুর মামলার আসামি হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। তারপর থেকে আদালতে একাধিকবার জামিন চেয়েও পাননি তিনি। ওই বছরের ১লা ডিসেম্বর শুক্রবার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকাবস্থায় বুকে ব্যাথা অনুভব করলে তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।