
গাজীপুরের শ্রীপুরে ষাটোর্ধ্ব শারীরিক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ ও তার স্ত্রীকে বসতবাড়ি ভেঙ্গে গুড়িয়ে বাড়ি ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে তার প্রভাবশালী প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। বসতবাড়ি ভেঙে দেয়ার পর থেকে বাড়ির পাশে একটি বাগানে রাত্রীযাপনের জন্য অবস্থান করছে তিনি।
শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী লাল মিয়া উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামের মৃত রহমান আলীর ছেলে। তিনি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। অভিযুক্ত প্রভাবশালী সিরাজুল ইসলাম একই গ্রামের মৃত মনসুর আলীর ছেলে।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় ওই প্রতিবন্ধী লাল মিয়ার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবন্ধী লাল মিয়া বাড়ির পাশে একটি বাগানের ভেতর শুয়ে আছেন, পাশেই বুক ফাটা আর্তনাতে আহাজারি করে বিলাপ করছেন তার স্ত্রী রাহেলা বেগম। জরাজীর্ণ ঘরের ঢেউটিনের চাল খুলে এদিক-সেদিক ফেলে রেখেছে। ঘরের আসবাবপত্র গুলো এলোপাতাড়ি ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে রয়েছে। প্রতিবেশীরা এরকম ঘটনা দেখতে বাড়িতে এসে ভীড় করলেও প্রভাবশালী প্রতিবেশীর বিপক্ষে কেউ শক্ত কোন অবস্থান গড়তে পারছেন না।
প্রতিবন্ধী লাল মিয়ার স্ত্রী রাহেলা বেগম বলেন, শনিবার সকালে প্রভাবশালী প্রতিবেশী সিরাজুল ইসলাম লোকজন নিয়ে এসে আমার স্বামীকে জোরপূর্বক টানা-হেঁচড়া করে বাড়ির বাইরে ফেলে রেখে এসে বসতবাড়ি ভাংচুর শুরু করে। এরপর আমি তাদের হাতেপায়ে ধরে বসতবাড়ি না ভেঙে দিতে অনুরোধ করি। কিন্তু ওঁরা থামেনি। আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু কিনেছি। কিন্তু ওঁরা আজ আমাকে রাস্তায় বসিয়ে দিলো। আমি অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে কোথায় থাকবো কি করবো। আজ আমাদেরকে ক্ষমতায় জোরে রাস্তায় বসিয়ে দিল। আমি এর বিচার চাই।
প্রতিবেশী দলিল লেখক আব্দুল খালেক বলেন, একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সঙ্গে এ ধরণের অমানবিক কাজ খুবই দুঃখজনক। আজ থেকে এই পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় হয়েছে খোলা আকাশের নিচে বাগানে। একজন প্রতিবন্ধী মানুষকে তার বসতবাড়ি থেকে জোরপূর্বক টেনেহিঁচড়ে বাগানে ফেলে রেখে বসতবাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দিলো ক্ষমতার জোরে। এতে আমরা খুবই আতংকিত। আমরা প্রতিবাদ করতে সাহস পাইনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. চান মিয়া বলেন, তাদের ডাক চিৎকার শুনে এসে দেখি বসতবাড়ির চাল খুলে নিচ্ছে। ঘরের আসবাবপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দিচ্ছে। এটা একটা অমানবিক কাজ। এর চেয়ে খারাপ কাজ আর হতে পারে না। আমরা কয়েকজন প্রতিবাদ করার কারণে আমাদেরকে মিথ্যা মামলার ভয় দেখায়। আমরা নিরুপায় একজন প্রতিবন্ধীর বসতবাড়ি রক্ষা করতে পারলাম না। অভিযুক্ত সিরাজুল হকের বক্তব্য নিতে তার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
এসময় তার স্ত্রী বেগম বলেন, আমরা তাদের কাছে জায়গা জমি পাই, এজন্য ঘরবাড়ি ভাংচুর করছে। এরপর স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এসে বসতবাড়ি নির্মাণ করে দিতে বলেছে। আমার স্বামী তাদের ঘরবাড়ি পুনরায় নির্মাণ করে দিবে।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আকবর আলী খান বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোভন রাংসা বলেন, ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছে। আমার দিক থেকে ওই পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।
মন্তব্য করুন