পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম মধুখালী গ্রামে জুয়েলের বাড়ি। তাঁর বাবার নাম মো. ইসমাইল গাজী। স্ত্রী রেবেকা সুলতানা এবং মেয়ে তাসমিম (৮), ছেলে তাইফুরকে (৩) নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। পরিবার নিয়ে তিনি ঢাকার বেইলি রোডের কাছাকাছি একটি এলাকায় বসবাস করতেন। জুয়েল রানা ঢাকার বেইলি রোডের বহুতল ভবনে আগুন লাগার পর নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। সে ওই ভবনটির সাত তলায় অবস্থিত এমবাসিয়া নামে একটি রেস্তোরায় বাবুর্চির (সেফ)র কাজ করতো। ৪/৫ বছর ধরে তিনি ওই রেস্তোরায় কাজ করতেন।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের বহুতল ভবনটিতে আগুন লাগার পর জানালা ভেঙে নামতে গিয়ে গাজী মো. জুয়েল রানা মৃত্যুবরণ করেন। একই রেস্তোরাতে তাঁর আপন ভাগিনা রাকিব আকনও কাজ করতো।

মুঠোফোনে রাকিব আকন জানায়, বহুতল ভবনটিতে আগুন লাগার পর তাঁরা তিনজন ছয়তলায় নেমে একটি জানালা ভেঙে বাহিরে নামার চেষ্টা করেন। প্রথমে রাকিব এবং পরে রেস্তোরার আরেক কর্মচারি ডিসের তার (ক্যাবল) বেয়ে নিচে নামেন। তাঁর মামা জুয়েল রানা জানালা দিয়ে বের হয়ে একটি এসির ওপর বসেন। এ সময় এসিসহ ভেঙে সে নিচে পড়ে যায়। ভবনটির জানালার কয়েকটি কার্নিশের সাথে তাঁর মামার শরীর আঘাত লেগে লেগে নিচে পড়ে। এতে তাঁর মাথা ফেটে যায় এবং মেরুদন্ড ভেঙে কয়েক টুকরা হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

শুক্রবার সরেজমিনে মৃত: জুয়েলের গ্রামে গেলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়, নিহত গাজী মো. জুয়েল রানার মা ফাতেমা বেগম বারবার মুর্ছা গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলেন, এই পোলার আয় দিয়াই আমরা চলতাম। পোলাডায় আমারে থুইয়া আগেই চইল্যা গেল। অ্যাহন আমার কী হইবে – এ কথাগুলো বলে আহাজারি করছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, মাত্র এক মাস আগে জুয়েলের ছোট বোন হাফিজার বিয়ে হয়েছে। জুয়েল ছুটি না পাওয়ায় বোনের বিয়েতে বাড়িতে আসতে পারেনি। রোজার আগে তাঁর বাড়ি আসার কথা ছিল। এসময় ছোট বোনকে তুলে দেয়ারও কথা ছিল।

নিহতের স্বজন ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে গাজী মো. জুয়েল রানার মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার (০১ মার্চ) কলাপাড়ার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম মধুখালী গ্রামে আসর নামাজ বাদ জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। এ মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকায় শোকের ছাঁয়া নেমে আসে।

মিঠাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের পশ্চিম মধুখালী এলাকার ইউপি সদস্য মো. কাওসার গাজী জানান, বাবা দিনমজুর। মানুষের বাড়ি-ঘরে কাজ করতেন। মূলত: জুয়েলের আয় দিয়েই পরিবারটি চলতো। কর্মক্ষম সন্তানকে হারিয়ে পুরো পরিবার শোকে কাঁতর হয়ে গেছে।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরাও খোঁজ-খবর নিয়েছি। শুনেছি পরিবারটি অতি দরিদ্র। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পরিবারকে সার্বিক সহায়তা করা হবে বলে জানান তিনি।