
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযানে একের পর এক মাদক কারবারি আটক ও মাদক উদ্ধার হলেও থেমে নেই মাদক কারবারিরা; বরং কৌশল পাল্টে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কারবার। পুলিশের অভিযানে কোণঠাসা হয়ে উল্টো পুলিশের ওপর হামলাও করছে তারা। সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের অভিযানে চিহ্নিত মাদক কারবারি আটক ও বিপুল মাদকদ্রব্য উদ্ধার হওয়ায় সচেতন নাগরিকরা যেমন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে, অপরদিকে পুলিশের ওপর হামলা ও প্রতিদিন মাদক উদ্ধার হওয়ায় সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ছেন তারা। তবে জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের এলাকা ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ লক্ষ্যে বিশেষ অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন তারা।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত শনিবার রাতে কোতোয়ালি মডেল থানার একটি বিশেষ আভিযানিক দল নগরীর ফলপট্টি এলাকার বিসমিল্লাহ আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে এক হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুই মাদক কারবারিকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন- বাউফল উপজেলার রাজাপুর এলাকার মো. বাবুল (৪২) ও বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের ভাতশালা এলাকার সজল ঘরামী (৩২)।
এর আগের দিন ১৫ সেপ্টেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বিএমপি বন্দর থানার লাহারহাট এলাকা থেকে ২ কেজি গাঁজাসহ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী নগরীর পলাশপুরের বাসিন্দা মৃত আব্দুল আজিজ বেপারীর ছেলে কামাল বেপারীকে (৩০) আটক করে বন্দর থানার পুলিশ। একই দিন এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সামনে থেকে ৮০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ কক্সবাজার জেলার মহেশখালী থানার মাতারবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ধানু মিয়ার ছেলে ওমর ফারুককে (৪১) আটক করা হয়।
১৩ সেপ্টেম্বর রাতে অভিযান চালিয়ে নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ড পলাশপুর এলাকা থেকে ১ কেজি গাঁজাসহ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মানিক মোল্লাকে (৪২) আটক করে পুলিশ। একই দিন এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের অভিযানে রহমতপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এলাকা থেকে বানারীপাড়া থানার সৈয়দকাঠি গ্রামের আফসার হাওলাদারের ছেলে মো. নিলয় হাওলাদারকে (২৬) আটক করা হয়।
গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ বানারীপাড়া থানার সলিয়াবাকপুর গ্রামের মৃত পারভেজ তালুকদারের ছেলে মো. জাহিদ তালুকদারকে (২২) আটক করে এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ।
এছাড়া ৩ সেপ্টেম্বর বাউফল থানার আদাবাড়িয়া গ্রামের মো. ফকুর উদ্দিন খন্দকারের ছেলে মো. লিটন খন্দকারকে আড়াই কেজি গাঁজাসহ আটক করে এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ।
২ সেপ্টেম্বর বন্দর থানার পুলিশের অভিযানে বিশারদ গ্রামের মো. আফজাল হোসেনের স্ত্রী মাদকব্যবসায়ী রোজিনাকে (২৭) আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ২ কেজি গাঁজা ও ৩০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে পুলিশ। একই দিন নগরীর পলাশপুরে অভিযানে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় আহত হয়েছেন কাউনিয়া থানা-পুলিশের দুই কর্মকর্তা। আহতরা হলেন- কাউনিয়া থানার এসআই গোবিন্দ ও এএসআই কামরুল। তবে পুলিশ ৩ হাজার ৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। এ সময় পলাশপুর এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী রিপন সরদারসহ (৩৫) ৯ জনকে আটক করে পুলিশ।
এছাড়া জেলা আইনশৃঙ্খলা সভার তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাসে বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকায় ১৮২টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে মাদকদ্রব্য ৮৬টি। আর আগস্ট মাসে ১৫৪টি অপরাধের মধ্যে মাদকদ্রব্য ৭৮টি।
এদিকে মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের জিরো টলারেন্স নীতির কারণে এখন আর প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা না হলেও গোপনে বিভিন্ন কৌশলে মাদক বিক্রি চলছে বলে জানা যায়। বর্তমানে বিভিন্ন বয়সি নারীরাও জড়িয়ে পড়ছে মাদক ব্যবসায়। বরিশাল নগরীর মাদকের আখড়াখ্যাত পলাশপুর, কেডিসি, কাউনিয়া ছাড়াও আশপাশের এলাকা মিলিয়ে রয়েছে শতাধিক মাদক ব্যবসার হটস্পট।
বিভিন্ন সূত্রের দেয়া তথ্যমতে, চিহ্নিত এলাকাগুলোতে পুলিশের তৎপরতার কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা কৌশল পাল্টানোর সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা বেছে নিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- রায়পাশা কড়াপুরের সোনামিয়ার পোল, কালিজিরা নদীর পাড়, সোনারগাঁও টেক্সটাইল এলাকা, চরকাউয়া, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, কাশিপুর ট্রাকস্ট্যান্ড, রুইয়ারপোল, ইছাকাঠী কলোনি, কাউনিয়া মতাসার, বাঘিয়া, কাউনিয়া হাওলাদার সড়ক, নতুন বাজার বস্তি, আমিরগঞ্জ বাজার, কাশিপুর বিল্ববাড়ি, নিলখোলার পাড়, বাটনা, লাকুটিয়া মোহনগঞ্জ বাজার, সারশি, জাম্বুরাতলা, কাউনিয়া বরফকল ও বিসিকসহ বিভিন্ন এলাকা। ওই সব এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা তৈরি করছে নতুন নতুন মাদকসেবী। বিশেষ করে উঠতি বয়সি যুবকরা জড়িয়ে পড়ছে মাদকের নেশায়। আর নেশার টাকা জোগাড় করতে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এখনই মাদকের আধিক্য বন্ধ না করা গেলে অচিরেই শেষ হয়ে যাবে শত শত যুবকের জীবন।
এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা শাহ্ সাজেদা বলেন, মাদকের বিস্তাররোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সবাইকে সচেতন হতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের কৌশল পাল্টানোর বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশকেও তাদের অভিযানের কৌশল পাল্টাতে হবে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) হামিদুল আলম বিপিএম, পিপিএম সেবা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে পুলিশ। তবে সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে হলে সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের সহযোগিতা ছাড়া পুলিশের একার পক্ষে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, মাদক নির্মূলে বিএমপি পুলিশের বিশেষ অভিযান চলছে- যা চলমান থাকবে। এ সময় তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের এলাকা ছাড়ারও হুঁশিয়ারি দেন।
মন্তব্য করুন