সমুদ্রে মাছের সুষ্ঠ প্রজনন ও উৎপাদন বাড়াতে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ (২৩ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টায়। বঙ্গোপসাগরসহ তৎসংলগ্ন নদীর মোহনায় মাছ শিকারের জন্য আজ মধ্য রাত থেকে মৎস্য বন্দরগুলোসহ উপকূলের জেলেরা যাবেন মাছ শিকারের জন্য। তবে এবছর মানা হয়নি সরকারের জারিকৃত (অবরোধ) নির্দেশনা। সমুদ্রে মাছ শিকার, বাজারজাত করণ,পরিবহন সবই চলেছে। চলছে বরফ উৎপাদন ও বিপনন। কাগুজে অবরোধের সময়সীমা শেষে জেলে পল্লীগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে তাদের সকলের মধ্যেই ফিরছে কর্মচাঞ্চল্য। নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন সমুদ্রে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষে সমুদ্রে যেতে শুরু করেছে জেলেরা।
নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন অনেক জেলেরা ছেড়া-ফুটা জাল ও নৌকা মেরামত করেছেন। এখন সমুদ্রে মাছ শিকারের জন্য অনেক নৌকা ও ট্রলার ইতোমধ্যে নির্ধারিত সময় শেষ না হতেই সাগর মোহনা থেকে নামছেন গভীর সমুদ্রে যাওয়ার জন্য। তবে এ বছর নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ৮০% জেলে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করেছে। বাকী ২০% জেলে মাছ শিকার করেনি। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকেই নৌকা ও ট্রলারগুলো মাছ শিকার করতে দেখা গেছে ফ্রি স্টাইলে। গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারের ট্রলারগুলো দাপিয়ে বেড়িয়েছে।
আর প্রকাশ্যে এসব কর্মকান্ড চলতে থাকলেও মৎস্য প্রশাসন, কোষ্ট গার্ড কিংবা নৌ পুলিশ কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি। কোটি কোটি টাকার লেনদেনে জেলেরো সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। ট্রলার প্রতি নেয়া হয়েছে ৫-১০ হাজার টাকা করে।
কুয়াকাটা, আলীপুর-মহিপুর, পাথরঘাটা, রাঙ্গাবালী, চরফ্যাশন সহ উপকুলীয় এলাকার মৎস্য আড়তগুলোতে ওপেনে বেচাবিক্রি চলেছে। তবে অবরোধকালীন সময়ে দিনের বেলায় বেচাকেনা কম হলেও রাতের বাজার জমজমাট ছিল। ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল হওয়ায় বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন নদীর মোহনায় এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। এই সময়ে দেশের সামুদ্রিক জলসীমানায় সব ধরনের মৎস্য শিকার, আহরন ও পরিবহন নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারের মৎস্য বিভাগ। তবে সরকারের জারিকৃত এই নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে জেলেদের এসব কর্মকান্ডে উপকুল জুড়ে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি কারোই। মৎস্য অধিদপ্তর, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলেরই ছিল নিরব ভূমিকা। জেলে ও মৎস্য ব্যাবসায়ীদের এসব অবৈধ এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড রোধে কোনো তৎপরতা ছিলনা। কোস্টগার্ড ও মৎস্য প্রশাসন দ্বায়সারাভাবে দু’য়েকটি অভিযান চালালেও তা ছিল লোক দেখানোর জন্য। যেসব জেলেরা অবরোধের মধ্যে মাছ শিকার থেকে বিরত ছিল তারা আগামীকাল ২৪ জুলাই থেকে সমুদ্রে যাবেন ইলিশ শিকারে। ইতোমধ্যে নৌকা মেরামত, ছেড়া ফুটা জাল মেরামত করে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
সরকারঘোষিত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন শেষে দীর্ঘ দিন পরে আমাদের মৎস্য বন্দরসহ পেশাজীবি সংশ্লিষ্ট সকলের কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে বলে জানান তারা। আলীপুর-মহিপুর, কুয়াকাটা সহ উপকূলীয় এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক জেলেরা জানান, সমুদ্রে সরকার ঘোষিত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মৎস্য কর্মকর্তা, প্রশাসনসহ সকলকে ম্যানেজ করে বীরদর্পে মাছ শিকার থেকে বেচাকেনা সবই চলেছে। তবে যারা অবরোধ মেনে মাছ শিকারে যায়নি তাদেরকে আড়তদাররা চাপ সৃস্টি করেছে মাছধরার জন্য।
কুয়াকাটা উপকূলে বেশ কয়েক জন জেলের সাথে কথা হলে তারা অভিযোগ করে বলেন, অবরোধকালীন সময়ে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় ঢুকে মাছ মাছ শিকার করে চলে যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই। তবে মৎস্য বিভাগ ও নৌ পুলিশের উদাসীনতায় অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে উপকূলের অধিকাংশ জেলেরা নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকেই সমুদ্রে মাছ শিকার করে আসছে; যা আসলেই দায়িত্বহীনতার সামিল। সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর মত দূঃসাহস বলে মনে করেন অনেকেই ।
কুয়াকাটা আশার আলো জেলে সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ নিজাম শেখ বলেন, অবরোধকালীন সময়ে গভীর সমুদ্র মাছ শিকার করেছে জেলেরা। সমুদ্র উপকুলবর্তী কিছু ছোট নৌকাও মাছ শিকার করেছে।
তিনি আরো বলেন, পায়রা বন্দর সংলগ্ন গভীর সমুদ্রে নৌ বাহিনী, কোস্টগার্ড থাকলেও তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। তিনি বলেন, সমুদ্রে অবরোধকালীন ভারতীয় জেলেদের মাছধরা বন্ধ করতে না পারলে কোন অবরোধই সফল হবে না বলে তার অভিমত।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, গত ১৯ মে থেকে শুরু হওয়া ৬৫ দিনের অবরোধ রবিবার (২৩ জুলাই) দিবাগত রাত ১২ টায় শেষ হচ্ছে। উপকূলের জেলেরা সুন্দরভাবে অবরোধ সম্পন্ন করেছে এবং অতীতের তুলনায় অনেক সচেতন হয়েছেন। সকল জেলেরা এখন সমুদ্র ও তৎসংলগ্ন নদীর মোহনায় অবাধে মাছ শিকার করতে পারবে। উপকূলের বেশিরভাগ জেলেরাই অবরোধ পালন করলেও কিছু কিছু জেলেরা অবরোধ অমান্য করে সমুদ্রে মাছ শিকার করেছে। এদের মধ্যে অনেককেই আমরা আইনের আওতায় এনে জেল জরিমানা করেছি। সমুদ্রে অবরোধকালীন সময়ে মাছ শিকার, বেচাকেনা ও বাজারজাত করার বিষয়ে কোনো সদূত্তর দিতে পারেনি ঐ কর্মকর্তা।