দেশের অগ্রযাত্রা, শান্তি-সমৃদ্ধি বজায় রাখতে মুক্তিযুদ্ধের শক্তির পক্ষে থাকার জন্য শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, একটি সরকারের টানা ১৪ বছর ধারাবাহিকতার কারণে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। কেবল সরকারের ধারাবাহিকতার জন্য শিক্ষার মান বৃদ্ধি, শিক্ষকদের নানা সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।

রোববার (১৬ জুলাই) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত অধ্যক্ষ সম্মেলন ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটা জিনিস বিশ্বাস করতেন- শিক্ষা ছাড়া একটা জাতি গঠন সম্ভব না। এজন্য তিনি আধুনিক, প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছিলেন এবং সেভাবে শিক্ষার জন্য কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি ১ লাখ ৬৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করে দেন। ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক স্কুলকে জাতীয়করণ করে দেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে শিক্ষকদের জন্য ১০০ টাকা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ টাকা ভাতা দেওয়া শুরু করেন। জাতি গঠনের জন্য এটা ছিল দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠনসহ নানা উদ্যোগ নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালো রাতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই অগ্রযাত্রা ব্যহত হয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা মানুষের অধিকার। সেজন্য বঙ্গবন্ধু শিক্ষায় যে অর্থ ব্যয় হত সেটাকে তিনি বিনিয়োগ হিসেবে দেখতেন। কিন্তু ৭৫ পরবর্তীতে সরকারগুলো ছাত্রদের হাত অস্ত্র তোলে দেওয়াসহ নানা অপকর্মে ছাত্রদের ব্যবহার শুরু করে। তাদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ছাত্রদের ব্যবহার করতো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা আসি তখন দেখি বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কম। বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ ছিল না। ১৯৯৬  সালে যখন ক্ষমতায় আসলাম তখন এসেই ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলাম কৃষি গবেষণা খাতে। ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখলাম শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণা খাতে। ১৯৯৬ সালে এসে কম্পিউটার শিক্ষার ওপর জোর দিলাম। কারণ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হলে বিজ্ঞানের প্রতি ছাত্রদের আগ্রহ বাড়বে বলে আমি বিশ্বাস করেছিলাম। আজ সেটার সুফল জাতি পাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেসময় ১২ বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করে দিলাম। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে ছাত্র-ছাত্রীদের বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে ১০ হাজার কম্পিউটার কিনতে নেদারল্যান্ডস সরকার অনুদান দেয়। সেসময় ১০ হাজার কম্পিউটার কিনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেওয়া শুরু করলাম। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়া শুনলেন- নেদারল্যান্ডের এই কোম্পানির নাম টিউলিপ। টিউলিপ নাম শুনেই তিনি রেগে গেলেন। আমার ছোট বোন রেহেনার মেয়ের নাম টিউলিপ। খালেদা জিয়া মনে করলেন এই কোম্পানি নিশ্চয়ই শেখ রেহেনার। এটা শুনে তিনি কম্পিউটার কেনা বাতিল করে দিলেন। এরপর টিউলিপ কোম্পানি মামলা করে পরবর্তীতে ৬০ কোটি টাকা জরিমানাও দিতে হলো। বিএনপি জামায়াত মানুষ শিক্ষিত হউক সেটা হয়ত চায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আমাদের জনসংখ্যা হিসাব করে, মানুষের কর্মদক্ষতা যেন বৃদ্ধি পায়, সেদিকে তিনি দৃষ্টি দিতেন। ১৯৭৩ সালে সংসদে বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসনও দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সালে যখন আমাদের এ অঞ্চলে, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যখন সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্ত হচ্ছে। তখন একটি প্রস্তাব আমরা পেয়েছিলাম, বাংলাদেশ বিনা পয়সায় সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হতে পারবে। সেসময় ক্ষমতায় খালেদা জিয়া। তিনি বলে দিলেন সংযুক্ত করা যাবে না। দেশের সব সিক্রেসি নাকি আউট হয়ে যাবে। সিক্রেসিটা কী, আউট বা কীভাবে হবে, সেটা আমরা জানি না। এরকম মানসিকতা নিয়ে আমাদের দেশ চলছে। কত পেছনে আমরা পিছিয়ে ছিলাম।