কলাপাড়ায় আন্দারমানিক নদীর সংযোগ মিঠাগঞ্জ ও বালীয়াতলী ইউনিয়নের স্বনির্ভরখাল (জিয়ার খাল) স্লুইসগেট (জলকপাট) দখল করে লবণ পানি ঢুকিয়ে মাছ শিকারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এরফলে প্রায় কয়েকশত একর জমিতে আউশের বীজতলা তৈরি ও আবাদে প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা করছে কৃষকরা। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় নদীতে পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে।
এ সুযোগে মাছ শিকার করতে মাসের শুরু থেকে ওই ইউনিয়নের কাংকুনীপাড়া, মধুখালী, আইমপাড়া এলাকার স্লুইসগেটি দখল করে বালীয়াতলী ইউনিয়নের শ্রমিকলীগের সিনিয়ার সহ-সভাপতি মো. সোহেল।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আন্দারমানিক নদীর সংযোগ মিঠাগঞ্জ ও বালীয়াতলী ইউনিয়নের ৮ কিলোমিটার প্রবাহমান স্বনির্ভরখাল (জিয়ার খাল)। চাষাবাদের জমিতে মিষ্টি পানির অভাব ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের খালে লবণ পানি প্রবেশ করিয়ে মাছ শিকার করছে।
আউশের ধান চাষ নিয়েও রয়েছে ১০টি গ্রাম চরম অনিশ্চয়তা। লবন পানিতে মাঠ তলিয়ে যাওয়ার কারনে গবাদিপশুর চরম খাদ্য সংকট ও আউশের বীজতলা নষ্ট হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে।
এসব গ্রামের মানুষের রান্না, গোসলসহ রয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। কৃষকের উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের সবজি নষ্ট হতে চলছে।
বর্তমানে খালটিতে নোনা পানিতে থৈথৈ করছে। এখন কৃষকদের হাড়িপাতালে করে মিষ্টি পানি গবাদিপশুকে খাওয়ানোর জন্য অন্যত্র নিয়ে যেতে হয় তাদের।
এ দৃশ্য ক্ষতিগ্রস্থ ওই সব গ্রামগুলোর সর্বত্র এখন চোখে পড়বে। এ খাল নদীর সাথে সংযোগ স্থলে রয়েছে একটি স্লুইসগেট। সেখান থেকে ইউনিয়নের স্লুইসগেট দিয়ে জিয়ারখাল নদীতে লবণ পানি প্রবেশ করানোর কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে কানকুনিপাড়া ও মধুখালী, হারিপাড়া, বৌদ্ধপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের কয়েক শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
শ্রমিক লীগের প্রভাবশালী নেতা সোহেল স্লুইসগেট গেট নিয়ন্ত্রণ করেন। বালীয়াতলী ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সিনিয়ার সহা-সভাপতি মো. সোহেল জানান, আমার কাছে স্লুইসগেটের চাবি আছে। স্লুইসগেট দেখাশুনা করি আমি নিজেই। কিন্তু আমিতো লবন পানি উঠাই না। কৃষকের যাতে সুবিধা হয় তা আমি করি।
বালীয়াতলী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য এনামুল মিয়া বলেন, আমি নিজে কয়েকবার বলছি যে লবন পানি না উঠায় কিন্তু প্রভাবশালী হওয়ায় কারো কথা শুনতেছেনা।
মিঠাগজ্ঞ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য আবু হাশেম জানায়, আমার তিন কেনির বেশি জমি রয়েছে এ বিলে। এখন আমি আউশের বীজ করছি। লবন পানি সব শেষ করে দিতেছে। শ্রমিকলীগের সিনিয়ার সহ-সভাপতি সোহেল কারো কথা শুনতেছে না।
নিজের সুবিধামতো লবণ পানি ওঠায়-নামায়। ওই পানির লইগ্যা আমাগো আস (হাঁস)-(মুরগি) মরতেছে। আমি জনপ্রতিনিধি হয়েও নিরূপায়, কৃষকের স্বার্থে কিছুই করতে পারছিনা। কাংকুনীপাড়া গ্রামের ড্রাগন চাষকারী কৃষক মো. মোস্তফা জামান বলেন, আমার এক একর জমিতে ড্রাগনসহ সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তুলছি। কিন্তু নদীতে-খালে লবন পানি। চৈত্র মাস থেকে গাছে বেশি করে পানি দিতে হয়। কিন্তু মিঠা পানি দিতে পারি না। আমার বাগানের এক হাত দূরে রয়েছে লবন পানি। ড্রাগন গাছে পানি না দেয়ার কারনে ফল দেরিতে আসছে। সরকার এভাবে স্লুইসগেটগুলো এভাবে লোক দিয়ে নিয়ন্ত্রন করলে কৃষকদের বেঁচে থাকার কোন উপায় নেই।
বালিয়াতলী ইউপি চেয়ারম্যান এ বিএম হুমায়ুন কবির জানান, লোনা পানি ঢুকানোর কোনো নিয়ম নেই। স্বনির্ভর খালটিতে লবন পানি ঢুকিয়ে মিঠাগজ্ঞ ও বালীয়াতলী ইউনিয়নের দুইউনিয়নের জনগনের ক্ষতি সাধিত হয় গনমাধ্যম কর্মীে দর কাছে শুনলাম। কারা লবন পানি উঠায় তা জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেন তিনি।
কলাপাড়াপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, কৃষকের স্বার্থে কৃষি অফিস সবধরনের সহযোগিতা করবে। কিন্তু স্লুইসগেট নিয়ন্ত্রন করে পানি উন্নয়ন র্বোড। লবন পানি এখন উঠালে কৃষকের ক্ষতি হবে। এখন সব জায়গায় বীজতলা তৈরি করার সময় এসেছে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানায়, কৃষকরা আমার কাছে এখনও লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ দিলে আমি ব্যবস্থা গ্রহন করবো। কৃষকের এমন ক্ষতি হয় তা আমি চাইনা।