মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার রমজানপুর ইউনিয়নের জোজিরা নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়টি এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। ওই বিদ্যালয়ে মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থীর জন্য নিয়োজিত আছেন শিক্ষক -কর্মচারী মিলে ৭জন। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।
সরেজমিন ও বিদ্যালয় সুত্রে জানাগেছে,জোজিরা নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়টি ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম ধাপেই ১৯৮৪ সালেএমপিও ভুক্তকরন করা হয়। এরপর বিদ্যালয়টি সুনামের সাথেই এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিয়ে আসছিল। কিন্ত বিগত কয়েক বছর ধরেই শিক্ষার্থী সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে ওই প্রতিষ্ঠানটি। বিদ্যালয়টি মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৬জন ও শিক্ষক-কর্মচারী মিলে রয়েছে ৭ জন। ৬ জন শিক্ষার্থী থাকলেও তা নিয়মিতভাবে বিদ্যালয় উপস্থিত থাকেনা। বেশিরভাগ সময় শিক্ষার্থী না থাকলে শিক্ষক-কর্মচারীদের অলসতায় বিদ্যালয় এসে দিনকাটাতে হয়। বিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় প্রশাসন একটি এ্যাটাক কমিটি করে দেন। কিন্তু সেই এ্যাটাক কমিটির মেয়াদও শেষ অনেক আগেই। এখন নামমাত্র একটি কমিটি দেখিয়ে দায়সারভাব চলে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। তবে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণেই এমনটা হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন স্থানী এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা। প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে হিরু মাস্টার গত চার বছর আগে এই প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে যে,রাজবাড়ী পাংশা থেকে আগত তৎকালীন প্রধান শিক্ষক বাবু জগবন্ধুকে অমান্য করে ক্লাসে অনুপস্থিত থেকে অনিয়ম করতেন এবং নিজেকে বড় মাপের নেতা বলে প্রতিষ্ঠিত করতেন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে হিরু মাস্টার। এছাড়া বিদ্যালয়ের মেয়াদহীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নুরুল হক রাড়ি ওই সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাবেক প্রধান শিক্ষক বাবু জগবন্ধুকে বিভিন্নভাবে অপমান অপদস্ত করতেন এবং আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে হিরু মাস্টারের অনিয়মে অতিষ্ঠ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে স্বেচ্ছায় বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে অব্যাহতি নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। এ সুযোগে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য দেখিয়ে ম্যানেজিং কমিটি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে হিরুকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়। বর্তমান প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে হিরু তার পছন্দ অনুযায়ী একক ক্ষমতা বলে কাগজে কলমে বারবার নুরুল হক রাড়িকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বানিয়ে বিদ্যালয় একক আধিপত্য বিস্তার কায়েম করে চলছেন।
এক পর্যায়ে ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হলে পুনরায় নুরুল হককে কমিটির সভাপতি বানানোর জন্য পায়তারা করে আসছেন প্রধান শিক্ষক। এলাকাবাসী নুরুল হক রাড়িকে সভাপতি পদে নির্বাচনের আপত্তি জানালে বিদ্যালয়ের মাঠেই বসেই সমর্থনের ভিত্তিতে সভাপতি পদে নির্বাচন দেয়া হয়। এ সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রধান শিক্ষক মিটিংয়ের এজেন্ডা পরিবর্তন করে কৌশলে লোক দেখানো উন্নয়নমূলক আলোচনা চালায়। কয়েকদিন পর স্কুল চলাকালীন সময়ও স্কুলে কোন শিক্ষার্থী শিক্ষক কর্মচারীকে দেখতে পাওয়া যায়নি। পরে স্থানীয় সাংবাদিকরা এ বিষয়টি ভিডিও ধারণ করতে গেলে দৌরে এসে একজন শিক্ষক তাড়াহুড়া করে বিদ্যালয়ে ঢুকে এবং কিছুক্ষণ পরে একজন কর্মচারী এসে স্কুলের তালা খুলে দেয়। অতঃপর দুপুরে ৬ জন শিক্ষার্থীর দেখা মেলে। ওই ৬ জনকে একটি রুমে বসিয়ে ক্লাস নিতে দেখা যায়। এদের মধ্যে একজন ষষ্ঠ শ্রেণীর, তিনজন সপ্তম শ্রেণীর ও দুইজন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও শিক্ষা ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এখানে কেউ লেখা পড়া করতে আসতে চায় না।
সহকারী শিক্ষক দুলাল সরকারের কাছে তার দেরি করে স্কুলে আসা এবং শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির বিষয় জানতে চাইলে তিনি ক্যামেরায় না এসে এড়িয়ে যান। এবং প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন আমরা তার বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতির বিষয় জানতে চাইলে বলেন তিনি স্কুলে আসলে কিছুক্ষণ পরে অফিসের কাজে চলে যান।
এ সময় এলাকার অভিভাবক আলি খান বলেন, প্রধান শিক্ষক বড় মাপের আওয়ামী লীগের নেতা তিনি কখনো স্কুলে আসেন না, ক্লাসও নেন না মাঝে মাঝে আসেন এবং আসলেই চলে যান।
এ বিষয় ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ খালেক শিকদার বলেন, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের কারণে শিক্ষার্থী শূন্য। তাই স্কুলটিতে সক্রিয় ম্যানেজিং কমিটি প্রয়োজন কিন্তু প্রধান শিক্ষক হিরো মাস্টার ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নিয়ে তালবাহানা করে আসছে। তিনি বিদ্যালয়টিকে জিন্মি করে রেখেছেন।
প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে হিরুর কাছে তার বিভিন্ন অনিয়মের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, অভিযোগ মিথ্যা এবং বানোয়াট আমার স্কুলের সকল বিষয় শিক্ষা অফিসার মহোদয় জানেন এবং অবগত আছেন।
অভিযুক্ত ম্যানজিং কমিটির সভাপতি নুরুল হক রারী ঘটনা অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিংকি সাহা জানান, কমিটির বিষয় খোজ নিয়ে দেখতেছি। সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি দেখবো।

মোঃ রাজু আহ‌ম্মেদ
কালকিনি প্রতিনিধি
তারিখঃ ১২-০৬-২৩ইং
০১৭৩২৫০৪৯৯৬