২০২২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানের রুমা জোনে অভিযানকালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ হাবিবুর রহমানের পরিবারের কাছে একটি তিনতলা ভবন হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

মঙ্গলবার(০৬ জুন) দুপুরে নিহত সেনা কর্মকর্তার নিজ বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার টাউন বহালগাছিয়া এলাকায় তার পরিবারের কাছে এ চাবি হস্তান্তর করে সেনাবাহিনী।

ভবন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেখ হাসিনা সেনানিবাসের ৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আবদুল কাইয়ুম মোল্লা।

এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মোঃ সাইদুল ইসলাম, পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ, নিহত সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, দুই ছেলে, জনপ্রতিনিধি ও সেনা কর্মকর্তারা।

সেনা প্রধানের পক্ষে “সেনা নিকেতন” নামের ভবনটির চাবি ও ৫ লক্ষ টাকার চেক নিহত সেনা কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুর রহমানের স্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন মেজর জেনারেল আবদুল কাইয়ুম মোল্লা।

চার তলা ভিত্তির উপর নির্মিত ভবনটির এক তলার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে এ ভবনটি প্রদান করা হয়েছে।

এসময় আবেগ আপ্লুত কন্ঠে নিহত সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছে। আমরা তাদের কাছে ঋণী। আমি আশা করি আমরা যাতে ভালো থাকতে পারি সেটি তারা খেয়াল রাখবেন।

মেজর জেনারেল আবদুল কাইয়ুম মোল্লা বলেন, ২০২২ সালে আমাদের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান সাহেব একটি অপারেশনে গিয়ে দুষ্কৃতিকারীদের হাতে নিহত হন এবং তিনি সেই অপারেশনে তিনজন দুষ্কৃতিকারীকে হত্যা করতে সক্ষম হন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের দেশের জন্য একটি আস্থার জায়গা। শুধু দেশেই নয় পুরো বিশ্বে বিভিন্ন কাজের জন্য তাদের ভাবমূর্তি উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে শান্তি রক্ষা মিশনে বিশ্বে এক বা দুই নাম্বার স্থানে আছে। সে কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্বের কাছে একটি পরিচিত নাম। আমাদের মূল দায়িত্ব দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। তার পাশাপাশি আমরা দেশের মানুষের কাছে এবং পাশে সব সময় থেকেছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় ও শৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের পাশে থেকেছে ও ভবিষ্যতেও থাকবে। আজকের অনুষ্ঠানটি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ হলো আমরা হাবিবুর রহমানের পরিবারের কাছে এই বাড়িটি হস্তান্তর করতে পেরেছি। আমি ধন্যবাদ জানাই সেনাবাহিনীর প্রধান কে যার প্রত্যন্ত সহযোগিতায় ও দিকনির্দেশনায় আমরা বাড়িটি নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমি গর্ব করে বলতে চাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি পরিবার। আমরা যতদিন চাকরিতে থাকি ও চাকরি থেকে বের হয়ে যাই আমরা এই পারিবারিক সম্পর্কটি বজায় রাখার চেষ্টা করি। যেমন আজকে পেরেছি। হাবিবুর রহমান আজকে আমাদের কাছে নেই তবু আমরা তার স্মৃতিকে ধারণ করছি এবং যতদিন আমরা বেঁচে থাকবো।

উল্লেখ্য, গত বছর ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বান্দরবান রিজিয়নের রুমা জোনে সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টহল দল বথিপাড়া এলাকায় গেলে জেএসএস পন্থী সন্ত্রাসীরা টহল দলের উপর অতর্কিত গুলি বর্ষন করে। এ সময় সেনাবাহিনী পাল্টা গুলি চালালে জেএসএস সন্ত্রাসীদের মূল দলের তিন সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। বাকি সদস্যরা পালানোর সময় এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়লে টহল টিমের কমান্ডার সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ হাবিবুর রহমান মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। নিহত হাবিবুর রহমান দুই পুত্র সন্তান রেখে গিয়েছেন । এরমধ্যে বড় ছেলে হাসিব হোসেন বাংলাদেশ ডিজেল প্লান্টে কর্মরত আছে ও ছোট ছেলে হাবিব বিন হাসান সেনাবাহিনীতে কর্মরত রয়েছে।