পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত রমজান মাসজুড়ে পর্যটকশূন্য থাকলেও আসন্ন ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ছুটিতে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমনের আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদকে ঘিরে হোটেল-মোটেল মালিক, রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী ও দোকানিরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আর ইতোমধ্যে হোটেলগুলোর অধিকাংশ কক্ষ আগাম বুকড হয়ে গেছে।

সাধারণত রমজান মাসে পর্যটক সংখ্যা কম থাকে, তবে অন্যান্য বছর কিছু দেশি-বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা দেখা গেলেও এবার সৈকত ছিল প্রায় ফাঁকা। কুয়াকাটার ঝিনুক মার্কেটের দোকানি আবুল হাসান বলেন, “রমজানে আমাদের বেচাকেনা প্রায় বন্ধ থাকে। এবারও তাই হয়েছে। তবে ঈদের ছুটিতে আশা করছি প্রচুর পর্যটক আসবেন, তখন বিক্রি ভালো হবে।”

হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরাও ঈদের পর্যটক স্রোত সামাল দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত। কুয়াকাটার অন্যতম আবাসিক হোটেল খান প্যালেসের ম্যানেজার ফাইজুল করিম জানান, “আমাদের ডিলাক্স কাপল ও ভিআইপি ডিলাক্সসহ মোট ৪৬টি কক্ষের মধ্যে ৭০ শতাংশ ইতোমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে। আশা করছি ঈদের আগেই পুরো হোটেল বুকড হয়ে যাবে।”

সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলাসের এজিএম আল-আমিন খান উজ্জ্বল বলেন, “আমাদের রিসোর্টেও ৭০ শতাংশ রুম বুকড হয়ে গেছে। ঈদে পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে সুইমিংপুল, বাড়তি সৌন্দর্য বর্ধনসহ নানা আয়োজন রাখা হয়েছে।”

এবার কুয়াকাটা আসতে সড়কপথে কোনো ভোগান্তি পোহাতে হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কের পাখিমারা থেকে আলীপুর ব্রিজ পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় থাকলেও সম্প্রতি তা সংস্কার করা হয়েছে। বাস চালক আশরাফ আলী খান বলেন, “আগে এই রাস্তায় প্রচুর সমস্যা হতো, তবে এখন খুব সহজেই পর্যটকরা কুয়াকাটা পৌঁছাতে পারবেন।”

ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের নির্বিঘ্ন ভ্রমণ নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌপুলিশ, থানা পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম কাজ করবে। ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের ইনচার্জ শাখাওয়াত হোসেন তপু জানান, “ঈদের সময় বাড়তি পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছি। ট্যুরিস্ট পুলিশের টিম লেম্বুরবন থেকে রামনাবাদ চ্যানেল পর্যন্ত পুরো সৈকতে নজরদারি করবে।”

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, “কক্সবাজারের মতো কুয়াকাটায়ও সরাসরি ট্রেন চালু হলে আরও বেশি পর্যটক আকৃষ্ট হবে। এতে যাতায়াতের খরচ কমে যাবে, সময়ও বাঁচবে।”

রমজানে ফাঁকা থাকলেও ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ছুটিতে কুয়াকাটা ফের পর্যটকে মুখর হয়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা ব্যবসায়ী ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। এবার পর্যটকদের আগমন রেকর্ড পরিমাণ হতে পারে বলে মনে করছেন হোটেল-মোটেল মালিকরা। সব মিলিয়ে ঈদের ছুটিতে ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের ঢল দেখার অপেক্ষায় আছেন।