গাজীপুর -ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার খিরু নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে দীর্ঘ ৮৫কিলোমিটার লবলং খালটি তুরাগ নদে গিয়ে মিশেছে। এই খাল কেন্দ্রীক শিল্প কারখানার মালিকরা গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান। কারখানার দখল দারিত্ব আর অব্যাহত দূষণে মৃত প্রায় খালটি ভরাট করে ডেকু গ্রæপের বিরুদ্ধে রাস্তা নির্মাণ করার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। কয়েকদিন ধরে এমন দখলষজ্ঞ চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে নয়নপুর থেকে মেডিক্যাল মোড় সড়কের লবলং খালটি দখলে মেতেছে ডেকু গ্রুপটি। জানা গেছে, কয়েক যুগ আগে ওই স্থানীয় ডেকু গার্মেন্টস্ ও ডেকু ফার্ণিচার নামে দুটি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে গার্মেন্টস্ এর ঝুট থেকে পলিথিন উৎপাদনের জন্য ইকোভিয়া নামে নতুন একটি কারখানা প্ল্যানিং আছে। ওই কারখানার জন্য লবলং খাল দখল করে রাস্তা নির্মাণ অভিযোগ উঠেছে ডেকু গ্রুপের বিরুদ্ধে।

সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, নয়নপুর থেকে পশ্চিমের সড়ক ধরে কিছুদুর এগুলেই লবলং খালটি চোখে পড়বে। লবলং খালের উপর সেতুর দুপাশে লোহার গ্রীল দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে রাখা হয়েছে। সেতুর দক্ষিণে খালের পূব পাশেই বালি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণের কাজ করছে ডেকু গ্রæপ। পুরো কার্যক্রম তদারকিতে রেখেছে ডেকু গ্রæপের নিরাপত্তা প্রহরী। খালে নির্দিষ্ট একটি বাদ দিয়ে পূর্ব পাশে প্রায় ১০/১২ফুট খালের জায়গা দখলের অভিযোগ তুলেছে স্থানীয়রা। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ অংশ ভরাট হয়ে গিয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি জমি ক্রয় করে রাস্তা নির্মাণ করছেন তারা। এতে ফুসে উঠেছে স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, আশপাশে এলাকা গুলোতে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরী হয়। বাসা বাড়ি পানিতে ডুবে যাওয়ার শঙ্কা তৈরী হয়। এ পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ হলো লবলং খাল। শিল্পের আগ্রাসনে খালটির বিভিন্ন অংশ দখল হয়ে গিয়েছে। তবুও যতটুকু বেঁচে রয়েছে তা যদি রক্ষা করা না যায় তাহলে ভবিষ্যতে জলাবদ্ধতায় করুন পরিনতি ভোগ করতে হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, লবলং খাল ভরাট হয়ে গেলে কৃষি জমিতে চাষাবাস বন্ধ হবে, কৃষি জমিতে সৃষ্টি হবে জলাবদ্ধতা। লবলং খাল রক্ষায় সরকারসহ স্থানীয়দের সহযোগিতা কামনা করেন। অপর বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, ডেকু গ্রæপ অন্যান্য শিল্পের আগ্রাসন থেকে খালকে রক্ষা করতে হবে। কয়েকদিন যাবৎ খালটি দখলের কার্যক্রম চলছে, তাদের থামানোর কোন উদ্যোগ এ পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়নি।

নদী, খাল ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে নদী পরিব্রাজক দল নামে একটি সংগঠন। ওই সংগঠনের শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেন, রাস্তা নির্মাণের জন্য খাল দখল করে ২০১৩ সালের পানি আইন অনুযায়ী খালটিতে দখলযজ্ঞ চালাচ্ছে ডেকু গ্রæপ। আমরা বরাবরই বলে এসেছি আইন মেনে সরকারী সার্ভেয়ার দ্বারা খালটি মেপে তাদের কার্যকক্রম পরিচালনা করার। কিন্তু তারা তাদের মতো করেই খালটিতে দখলযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। খালটিতে দখলদারিত্ব বন্ধে আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি। খালটিতে দখলযজ্ঞ বন্ধ করা না হলে আমরা আন্দোলনসহ নানা ধরনের সামাজিক কার্যক্রম গ্রহণ করবো।

এবিষয়ে জানতে কথা হয় ডেকু গ্রæপের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) তাপস কুমার কুন্ডু’র সাথে। তিনি বলেন, আমরা খালের পাশের জমি ক্রয় করে রাস্তা নির্মাণ করছি। আমরা লবলঙ্গ খাল জবরদখল করিনি। বালু ভরাটের সময় ট্রাক উল্টে কিছু বালু খালে মধ্যে চলে গিয়েছিল। পরে আমরা তা সরিয়ে নিয়েছি।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজিব আহমেদ বলেন, এবিষয়ে তাদের কাগজপত্র দেখা হচ্ছে। যদি খাল দখলের মতো কোন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বশির আহমেদ কাজল
গাজীপুর
১৮.০৯.২০২৪ইং