গাজীপুরের ভাওয়াল রেলস্টেশনের কাছে কেটে রাখা লাইনে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ১জন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন, আহত হয়েছে অন্তত ৯জন।

বুধবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ রেল লাইনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রশাসন বলছে নাশকতা সৃষ্টির জন্যই গ্যাস কাটার দিয়ে এ রেললাইন কেটেছে দুর্বৃত্তরা।

দুর্ঘটনায় নেত্রকোনা থেকে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জগামী ট্রেনটির ইঞ্জিনসহ ৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ের পক্ষ থেকে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে এ দুর্ঘটনার পর বিকল্প পথে ভৈরব- কিশোরগঞ্জ হয়ে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ট্রেনচলাচলের ব্যবস্থা করে রেলবিভাগ।

নিহত ব্যক্তি আসলাম(৩৫) একজন মুরগীর ব্যবসায়ী। তার বাড়ী ময়মনসিংহ জেলার গফরগাও উপজেলার রওহা গ্রামে। তার লাশ উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই দুর্বৃত্তরা রেলপথের একটি অংশ কেটে রেখেছিল। ট্রেনটি ওই স্থানে পৌছালে ইঞ্জিন সহ চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবিরকে প্রধান করে পাচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

রেলওয়ের জয়দেবপুর স্টেশন মাষ্টার হানিফ আলী বলেন, যাত্রীবাহী মোহনগঞ্জ ট্রেনটি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকার কমলাপুরের দিকে যাচ্ছিল। গতকাল রাতের কোন এক সময় দুর্বৃত্তরা গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর ও ভাওয়াল রেলস্টেশনের মাঝামাঝি বনখড়িয়া এলাকায় একটি অংশ কেটে রাখে। বুধবার ভোর রাত সোয়া চারটার দিকে এই ট্রেনটি রাজেন্দ্রপুর ষ্টেশন পাড় হয়ে ভাওয়াল রেল ষ্টেশনে পৌছানোর আগেই লাইনচ্যুত হয়ে পরে। এতে ঘটনাস্থলেই এক যাত্রী মারা যায়, আহত হয় অন্তত ৯জন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা।

রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক সফিকুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে নাশকতার জন্যই দুর্বৃত্তরা রেললাইনের প্রায় ২০ফুট অংশ কেটে রেখেছিল। ঘটনাস্থলেই গ্যাসের বোতল পড়ে ছিল, ধারনা করা হচ্ছে গ্যাস কাটার দিয়েই লাইনটি কাটা হয়েছে। এরপরও সঠিক কারণ অনুসন্ধানে বিভাগীয় সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী সৌমিক শাওন কবিরকে আহবায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তারা রিপোর্ট পেশ করবেন।

এ ঘটনায় দুর্বৃত্তদের ধরতে যৌথভাবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থাগ্রহন প্রক্রিয়াধীন।

রেল লাইনে নাশকতার এ ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারী দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজ সৈয়দ নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, যারা নাশকতাকারী, যারা এতোবড় একটি দুর্ঘটনার পরিকল্পনা করেছে তাদের সবাই খুজে বের করবো আমরা। তাদেরকে আইনের আওতায় আনার সাথে সাথে সারাদেশে সবার মাঝেই একটি ম্যাসেজ চলে যাবে। আমাদের দেশে কয়েকহাজার কিলোমিটার রেললাইন আছে, নির্বিঘে চলাচলে এখন আমাদের দেশের মানুষের আস্থার একটি জায়গা ট্রেন।

তিনি আরো বলেন, এঘটনার তদন্তের মাধ্যমে আমরা যে ক্লো পাবো তাদের প্ল্যানিং, প্রিপারেশন, এখানে রেল লাইনকে গলিয়ে ফেলা হয়েছে, অক্সিজেন ও ইথেন গ্যাস একসাথে সংযুক্ত করে দেড় দুই হাজার তাপমাত্রা হয়ে যায় এধরনের ম্যাকানিজম যারা দিয়েছে , যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তাদেরকে আমরা আইনের আওতায় আনবো। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ট্রেনে আর যেন কেউ নাশকতা চালাতে না পারে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা আমরা নেব।

দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান , এসময় তিনি এ ঘটনায় একজন নিহতের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, নিহতের পরিবারকে রেলওয়ের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এ ঘটনায় আমাদের ড্রাইভার ও সহকারী লোকো মাষ্টার আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন। অন্য সাতজন আহত হলেও তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ীতে চলে গেছেন।

তিনি আরো বলেন, এটা পুরোপুরি নাশকতা। কেননা এখানে রেললাইন গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এই লাইনে লাস্ট ট্রেন চলেছে তিনটার দিকে। পরে এক ঘন্টার ব্যবধানে স্বল্প সময়ের মধ্যে তারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। কখন রেল চালু হতে পারে এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বিকল্প পথে ট্রেন চলার ব্যবস্থা করেছি। তাই আমরা আজকের দিনটা এখানে কাজের জন্য নিয়েছি। কাজ চলছে।

এ দুর্ঘটনার ফলে রেল লাইনের প্রায় ৬শত ফুট এলাকার লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ঢাকা ও ময়মনসিংহ থেকে একাধিক রিলিফ ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে পৌছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। পাশাপাশি রেলওয়ের দুই শতাধিক সদস্য লাইন মেরামত কাজে যুক্ত হন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায় দুর্ঘটনায় ইঞ্জিন ,বগি ও ১০০টি স্লিপার ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ৩০০ফুট রেল লাইনে নতুন করে পাত বসানো হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের আশা রাতের মধ্যেই রেল চলাচল শুরু হতে পারে এ লাইনে।