পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় খেপুপাড়া নেছারুদ্দিন ফাযিল মাদ্রাসার গাড়ী নেই, তবুও তেল খরচ বাবদ প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত টাকা নেন অধ্যক্ষ। এছাড়া ক্যাশ বহিতে গড়মিল, ইবতেদায়ী থেকে ফাযিল পরীক্ষার প্রবেশপত্র বিতরনে অর্থ আদায় করে লোপাট, প্রতিষ্ঠানের মোটা অংকের অর্থ হস্তমজুদ, উপবৃত্তির টাকা বিতরনে নয়-ছয়সহ অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ফাঁসের পর দীর্ঘদিনেও ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে অধ্যক্ষ মো. নাছির উদ্দিন হাওলাদার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে বিত্ত বৈভব গড়ে তুলেছেন। অধ্যক্ষের এ দুর্নীতি-অনিয়ম রোধে যেন কোন দায় নেই মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, কলাপাড়া পৌর শহরের আরবি শিক্ষায় আলোকিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খেপুপাড়া নেছারুদ্দিন ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে মো. নাছির উদ্দিন হাওলাদার ১ ডিসেম্বর ২০১৯ যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত হয়ে ওঠেন তিনি। ফাঁস হয় তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ। এতে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) তার যোগদানের পর থেকে সকল আর্থিক বিষয়ে নিরীক্ষার নির্দেশ দেন। ফলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন খাতে আদায়কৃত অর্থ, সরকারী-বে-সরকারী দাতা সংস্থা, ব্যক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ ও উপবৃত্তির অর্থ নিয়ে অধ্যক্ষের কেলেংকারী ফাঁস হয়ে পড়ে।

বৃহস্পতিার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, খেপুপাড়া নেছারুদ্দিন ফাযিল মাদ্রাসার গনিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ১ম, ২য় নিরীক্ষা কমিটির আহবায়ক মো. আলিমুজ্জামান জানান, অধ্যক্ষের যোগদানের পর থেকে মাদ্রাসার আর্থিক বিষয়ের নিরীক্ষায় অনেক মোটা অংকের অনিয়ম পাওয়া গেছে, এরপর ২৮ জুলাই ২০২২ তারিখে পুন:নিরীক্ষার নির্দেশ দেয়া হয়। যা প্রতিবেদনে উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিলের পর অধ্যক্ষ পুন:নিরীক্ষার আবেদন করেন। এতে পুন:রায় নিরীক্ষা করেও একই সমস্যা পেয়েছি। যা তালিকা করে জমা দেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা পড়ার পর পুন:নিরীক্ষার আবেদন করেন আলোচিত মাদ্রাসা অধ্যক্ষ। এরপর কর্তৃপক্ষ বর্তমান বছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিষয়ের নিরীক্ষার জন্য অভিভাবক সদস্য গাজী আব্বাস উদ্দিন বাচ্চুকে আহবায়ক করে নিরীক্ষা কমিটি গঠন করেন, যারা নিরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়াও প্রয়াত জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাইদীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোষ্ট দিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মো: নাছির উদ্দিন। এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে তিনি ভুল স্বীকার করে পোষ্টটি সরিয়ে নেন।

মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের অভিভাবক সদস্য ও নিরীক্ষা কমিটির আহবায়ক গাজী আব্বাস উদ্দিন বাচ্চু বলেন, তদন্তে অধ্যক্ষের আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়েছে। যার জন্য তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা প্রতিবেদন দাখিল করবো।

খেপুপাড়া নেছারুদ্দিন ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. নাছির উদ্দিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মাদ্রাসার আর্থিক হিসাব-নিকাশ দেখার জন্য ফিনান্সিয়াল কমিটি আছে, তারা সবকিছু দেখেন। মাদ্রাসার কোন গাড়ী না থাকলেও মাদ্রাসার কাজে আমার মোটরসাইকেলটি ব্যবহার হলে তেল খরচ নেই। এছাড়া প্রয়াত দেলোয়ার হোসেন সাইদীকে নিয়ে বিষয়টি মাদ্রাসা মটিংয়ে নিস্পত্তি হয়েছে।

মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, পটুয়াখালী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. তারেক হাওলাদার বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহনের পূর্বেই নিরীক্ষা কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমার কাছে এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি। মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত প্রমানসহ আর্থিক অনিয়ম পাওয়া গেলে বিধি ও নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।