সিলেটের ধামাইল গান ও ধামাইল নাচ সিলেট অঞ্চলে প্রচলিত একজাতীয় কাহিনী সংবলিত নৃত্য যা এই অঞ্চলের লোকসাহিত্যের একটি অংশ। এটি মুলত নারীদের আচারকেন্দ্রিক নাচ-গান। পালা-পার্বন, অনুষ্ঠান, জন্ম, বিয়ে, প্রভৃতি সামাজিক উৎসবে ঘটা করে ধামাইল নাচ-গান করা হয়ে থাকে।

জনপ্রিয় এই ধামাইল নিয়ে শ্রীমঙ্গলের এসি ল্যাণ্ড ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্দ্বীপ তালুকদার আজ শুক্রবার ( ৮ সেপ্টেম্বর) ফেসবুকে একটি পোস্টে ধামাইল নিয়ে তার স্মৃতিচারন করেছেন। অসম্ভব সুন্দর এই লেখাটি নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলো—

ধামাইল কথা ও অন্যান্য

বাড়ি যেহেতু হাওড় পাড়ে, ধামাইল সংগীত এর সামাজিক প্রভাব খুবই কাছ থেকেই দেখার সুযোগ হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান,ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ধামাইল সবমসময় তার অস্তিত্ব জানান দিয়েছে। অনেক স্মৃতি রয়েছে ধামাইল নিয়ে প্রতিটি হাওড় পাড়ের মানুষের সাথে। ব্যাতিক্রম আমিও নই। আজকের এই স্মৃতিচারণের সাথে হয়তো অনেকের স্মৃতির মিল পাওয়া যাবে। অনেকেই নস্টালজিক হবেন।

শিশুকালের দুরন্তপনা—
ধামাইল গান কি,কেমন তার মাহাত্ব্য তা না জানলেও ধামাইল গানে আমাদের অংশগ্রহণ ছিলো। বাড়িতে যখন বিয়ের অনুষ্ঠান হতো, মা, কাকি,বোনরা যখন ধামাইল সংগীত পরিবেশন করতো, তখন আমাদের কাজ ছিলো তাদের ফাঁকেফাঁকে নিজেরাও তাল মেলানোর চেস্টা করা। এতে হয়তো শিল্পীদের সাময়িক ছন্দপতন হতো, কিন্ত কখনো কেউ নিষেধ করতো না।

কৈশোর এর আবেগ
ব্যাক্তিগতভাবে ধামাইল এর মাহাত্ব্য কিছুটা অনুভব করা শুরু হলো। রাধাকৃষ্ণ কে নিয়ে রচিত এসব গানে অনেক আবেগ ঘন কথার পাশাপাশি রয়েছে তার বৈচিত্র্যময় সুর। মন দিয়ে শুনলে অনুভূতি কে নাড়া দেয়। আমার মা ধামাইল গান করতেন। আমি অনেকবার শুনেছি আমার মায়ের গান। একটা গান আমার মা প্রায়ই গাইতেন, যে গানটার কথা আমার কাছে সবসময়ই আধুনিক মনে হয়।

” আমি শ্রীচরণে ভিক্ষা চাই
মান কইরো না কমলিনী রাই”।

বয়স যখন ১৮ পেরিয়ে বিয়ে বাড়িতে গায়ে হলুদের রাতে সারারাত ধামাইল শুনতাম।
আর সাথে থাকতো বিয়ে বাড়ির লোকজনের পক্ষ থেকে কিছুক্ষণ পরপর গরম ধোয়া উঠানো চা। অসাধারণ সেইসব স্মৃতি আমাদের।

নতুন পথের সন্ধান
২০০৪ সালে কৌতুহলবশত ৯ দিনের জন্য চৈত্র সংক্রান্তির চড়ক পূজায় সন্ন্যাস দলে যোগ দিয়েছিলাম। এযেন ধামাইলের আরেক মিলন মেলা। একসাথে ৫০/৬০ জন ছেলে একসাথে গোল হয়ে একই ছন্দে ধামাইল পরিবেশন সবকিছুকেই ছাড়িয়ে যেত। অনেক লোকসমাগম হতো এই দৃশ্য উপভোগ করার জন্য। সবচেয়ে অবাক হয়েছিলাম বিদায়ের দিন। ধামাইল যে মানুষকে কাদাতে পারে,সেদিন বুঝেছিলাম। একসাথে শতাধিক সন্ন্যাসী মিলে ধামাইল পরিবেশন করছে আর কেঁদেকেটে লুটোপুটি খাচ্ছে।

“ডাকতেছে ভারতী গোসাঁই
বিদায় দাও মা সন্ন্যাসে যাই”।

সেই রুপ যারা দেখেছিলেন সবাই কেঁদেছেন।
এরপর আর ঐ গ্রামে যাওয়া হয়নি। একবার যাওয়ার ইচ্ছে আছে।

সাংগঠনিক ধামাইল
এটার দরকার আছে। অনেক আগেই এর সাংগঠনিক রুপ দেয়ার প্রয়োজন ছিলো। এখন হচ্ছে। অনেকেই এগিয়ে আসছেন এই ধামাইল কে সাংগঠনিক রুপ দেয়ার জন্য। ধন্যবাদ তাদের।

পরিশেষে বিশেষভাবে স্মরণ করি সেইসব ধামাইল কবিদের যাদের অবদান আমাদের সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা দিয়েছে।ধামাইল সংগীত জন্য শুভ কামনা করছি।