মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার হায়াপাড়া গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা জামাল উদ্দিন চলতি মৌসুমে বাতাবি লেবু (জাম্বুরা) বিক্রি করে প্রায় তিন লাখ টাকা আয় করেছেন। পাহাড়ি টিলায় গড়ে তোলা তাঁর বাগানের ১১০টি গাছে এবার হয়েছে বাম্পার ফলন।
জামাল উদ্দিন বলেন, ‘এবার আবহাওয়া ছিল অনুকূলে। আমার কিছু গাছে ৫০০ থেকে ৬০০টি পর্যন্ত জাম্বুরা ধরেছে। ফলনও ভালো, দামও ভালো পেয়েছি। চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকায় জাম্বুরা বিক্রি করেছি।’
জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি ও পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের পাহাড়ি টিলাগুলো এখন বাতাবি লেবুর সবুজ বাগানে ভরপুর। এখানকার অধিকাংশ বাতাবি লেবু চাষ হয় প্রাকৃতিক উপায়ে, কোনো সার বা কীটনাশক ছাড়াই। ফলে এই ফল শতভাগ নিরাপদ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই অন্তত কয়েকটি জাম্বুরা গাছ আছে। অনেকের বাগানে আবার ৮০ থেকে ১০০টি পর্যন্ত গাছ রয়েছে। তাদের মতে, জুড়ীর বাতাবি লেবু স্বাদে মিষ্টি, তিতাহীন এবং রসালো হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল আলম খান জানান, ‘জুড়ীতে বর্তমানে প্রায় ৬৭ হেক্টর জমিতে বাতাবি লেবুর চাষ হয়। বার্ষিক মোট উৎপাদন প্রায় ১২০০ মেট্রিক টন। এগুলো সম্পূর্ণ জৈব উপায়ে উৎপাদিত, কোনো সার বা কীটনাশক ছাড়াই। জুড়ীতে এ বছর বাতাবি লেবু থেকে আয় হচ্ছে ৫ কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জুড়ীর ভালো জাতগুলোকে তালিকাভুক্ত করেছি। জুড়ী বাতাবি লেবু-১ ও জুড়ী বাতাবি লেবু-২ জাত দুটি খুবই সুস্বাদু ও তিতাহীন। এছাড়া আরও ১২টি নতুন জাতের সন্ধান পাওয়া গেছে। আমরা আগামী মৌসুমে ১০ হাজার চারা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি।’
কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম খান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য জুড়ী উপজেলাকে বাতাবি লেবুর ব্র্যান্ডেড অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা। এজন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহায়তায় আগামী বছর ‘বাতাবি লেবু মেলা’ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জুড়ীর পাহাড়ি টিলার মাটি ও জলবায়ু বাতাবি লেবুর জন্য খুব উপযোগী। স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহ ও বাজার চাহিদা বাড়ায় এটি ভবিষ্যতে অন্যতম অর্থকরী ফসলে পরিণত হতে পারে।’
স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, জুড়ীকে ব্র্যান্ডিং করা হবে বাতাবি লেবুর জেলা হিসেবে। কৃষকদের প্রত্যাশা, সরকার যদি সহায়তা দেয়, তবে ‘জুড়ীর বাতাবি লেবু’ আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানি করা সম্ভব।
মন্তব্য করুন