উন্নয়ন কাগজে, বাস্তবে স্থবিরতা: স্থানীয়..

প্রকাশ: ৮ অক্টোবর ২০২৫ । ১৬:১১ | আপডেট: ৮ অক্টোবর ২০২৫ । ১৬:১১

অপূর্ব সরকার, পটুয়াখালী করেসপন্ডেন্টঃ

সরকারি বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও দেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে উন্নয়ন কার্যক্রমের বাস্তব অগ্রগতি তেমন চোখে পড়ার মতো নয়। বাজেটের সীমাবদ্ধতা, পরিকল্পনার দুর্বলতা এবং তদারকির অভাবে অনেক প্রকল্প কাগজে শেষ হলেও, মাঠপর্যায়ে তার কার্যকরী বাস্তবায়ন ও উপকারীতা দেখা যায় না বললেই চলে। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, অধিকাংশ ইউনিয়নের বার্ষিক বাজেট ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ, যা প্রধানত ইউনিয়ন পরিষদের আয় থেকে আসে। এই অপ্রতুল অর্থ দিয়ে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়।

তথ্য সূত্রে আরো জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ ২০১১ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়, কিন্তু বিগত ১৫ বছরেও এই তথ্য হালনাগাদ করা সম্ভব হয়নি, ব্যর্থতা আসলে কার?। বর্তমানে ইউনিয়ন ভিত্তিক জনসংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও বরাদ্দ অপরিবর্তিত রয়েছে, যা বাস্তব উন্নয়ন কার্যক্রমে বড় বাধা সৃষ্টি করছে।

এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) থেকে আসা অর্থ নিয়েও নানা অভিযোগ এবং সন্দেহ রয়েছে। প্রকল্প প্রণয়নে দক্ষতার অভাব, স্বচ্ছতার ঘাটতি এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অনেক প্রকল্প অসম্পূর্ণ বা মানহীনভাবে সম্পন্ন হয়। কিছু ক্ষেত্রে কাগজে ‘সমাপ্ত প্রকল্প’ দেখানো হলেও বাস্তবে তার কোনো সাফল্য বা দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায় না। কেন্দ্রীয়ভাবে নেওয়া উন্নয়ন পরিকল্পনা অনেক সময় স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না। প্রতিটি অঞ্চলের সমস্যা আলাদা কোথাও নদীভাঙন, কোথাও খরা, কোথাও সড়কসংকট, তবে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনায় এই বৈচিত্র্য প্রতিফলিত হয় না। ফলে, এসব প্রকল্প জনগণের প্রকৃত চাহিদা পূরণ করার বদলে অনেক সময় অর্থের অপচয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া, রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দের কারণে প্রকল্প নির্বাচনে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে, উন্নয়ন প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে ওঠে।

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন ও বেতাগীর হোসনাবাদ ইউনিয়নের সংযোগ সড়ক ধরে একটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ছিল ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা সরকারী বরাদ্দ থেকে আসা অর্থের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। প্রকল্পটি কাগজে ছিল একেবারে নিখুঁত, সবার মুখে হাসি ফুটানোর মতো। তবে বাস্তবে সেতুটি সেখানকার মানুষের জন্য কোনো উন্নয়ন না হয়ে, বরং নতুন সমস্যার সৃষ্টি করল।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেতুর দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক না থাকায় এটি পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এতে করে সেতু ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। আরও বড় সমস্যা হলো, সেতুর উচ্চতা খুবই কম, যার কারণে বড় ট্রলার নদীতে চলাচল করতে পারছে না। আগে যেসব মানুষ সহজেই তাদের পণ্য নিয়ে নদী পারাপার হতে পারত, এখন তারা সেই সেতু ব্যবহার না করে আবার পুরনো পথ ধরতে বাধ্য হচ্ছে। সেতু তো চলাচলের সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখন তা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একদিন, সেতুর পাশে বসে একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বললেন, “এই সেতু আমাদের জন্য উন্নয়ন নয়, বরং কষ্টের কারণ। সরকারের কোটি টাকা খরচ হয়েছে, কিন্তু কেউ উপকার পেল না।” তিনি আর বললেন, “প্রকল্পটি কাগজে ছিল সুন্দর, কিন্তু বাস্তবে সেটা আমাদের কাজে আসছে না।”

এই প্রকল্প দুর্বল পরিকল্পনা, তদারকির অভাব এবং স্বচ্ছতার ঘাটতির একটি জীবন্ত উদাহরণ। স্থানীয় জনগণের মতামত বা প্রয়োজনীয়তা যাচাই ছাড়া যে কোনো প্রকল্প নেয়া, তা দীর্ঘমেয়াদে উন্নয়ন নয়, বরং জনঅসন্তোষ সৃষ্টি করে। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে যদি জনগণের অংশগ্রহণ না থাকে এবং স্থানীয় বাস্তবতাকে গুরুত্ব না দেওয়া হয়, তবে উন্নয়ন শুধু কাগজেই থেকে যায়।

এই ধরনের প্রকল্প থেকে শিক্ষা নিয়ে, বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, উন্নয়ন টেকসই করতে হলে প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য পৃথক স্থানীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (Local Adaptation Plan) প্রণয়ন করা উচিত। এতে স্থানীয় জনগণের চাহিদা এবং বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিকল্পিত হবে এবং প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অধিক কার্যকর হবে।

উন্নয়ন তখনই অর্থবহ হয়, যখন তা জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী হয়। কেন্দ্রীয় নির্দেশে নয়, স্থানীয় বাস্তবতা ও জনগণের মতামতের ভিত্তিতে পরিকল্পনা করা গেলে উন্নয়ন হবে টেকসই ও ফলপ্রসূ। না হলে আমড়াগাছিয়ার মতো কোটি টাকার সেতু শুধু ব্যর্থ প্রকল্পের প্রতীক হয়ে থাকবে।

উপদেষ্টা সম্পাদকঃ রোমান চৌধুরী।

প্রকাশকঃ  সানজিদা রেজিন মুন্নি।

সম্পাদকঃ কামরুজ্জামান বাঁধন।

নির্বাহী সম্পাদকঃ মোঃ জালাল উদ্দিন জুয়েল।

মোবাইলঃ ০১৭১১-৯৫৭২৬৩, ০১৭১২-৮৩১৪৪৭

মেইলঃ rhbnews247@gmail.com, CC: rhbnews.nd@gmail.com

ঢাকা অফিসঃ এ্যাড পার্ক, ওয়াজী কমপ্লেক্স (৯ম তলা), ৩১/সি, তোপখানা রোড, সেগুনবাগিচা, ঢাকা -১০০০.

error: Content is protected !!