বাংলা নববর্ষকে ঘিরে নতুন উদ্যোমে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন পটুয়াখালীর বাউফলের মৃৎশিল্পীরা। বৈশাখের উৎসবকে সামনে রেখে রঙ-বর্ণে সাজানো মাটির শিল্পপণ্য বিক্রির লক্ষ্যে তারা দিন-রাত পরিশ্রম করে চলেছেন। এবারের বৈশাখে কোটি টাকার পণ্য বিক্রির আশা করছেন এখানকার কারিগর ও ব্যবসায়ীরা।

জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে বাউফল উপজেলার কনকদিয়া, বগা, মদনপুর ও বিলবিলাস—এই চারটি গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবার প্রজন্ম ধরে মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। শক্ত ও উপযোগী এঁটেল মাটি দিয়ে তৈরি হচ্ছে হরেক রকম পণ্য—গৃহস্থালির ব্যবহারের জিনিসপত্র থেকে শুরু করে নান্দনিক গৃহসজ্জাসামগ্রী পর্যন্ত। কেউ মাটি গড়ছেন, কেউ রং তুলির ছোঁয়ায় পণ্য সাজাচ্ছেন, কেউ বা রোদে শুকিয়ে বা প্যাকেজিংয়ে ব্যস্ত।

মৃৎশিল্পের প্রবীণ কারিগর বরুণ পাল জানান, ‘শুরুর দিকে কেবল হাড়ি-পাতিল ও খেলনা তৈরি হতো। এখন সময়ের চাহিদায় বৈচিত্র্য এসেছে। সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে মাটির তৈরি ডিনার সেটের। একটি ১৬ পিসের সেটের দাম পড়ে আড়াই থেকে চার হাজার টাকা।’

বরুণ পাল আরও বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন নামকরা ব্র্যান্ড আমাদের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে বাজারজাত করছে। এমনকি এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সৌদি আরব, বাহরাইনসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে। বিদেশি অনেক ক্রেতা সরাসরিই গ্রামে এসে পণ্য কিনে নিয়ে যান।’

আরেক মৃৎশিল্পী কমল পাল বলেন, ‘বৈশাখী মেলা ও উৎসব ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের পণ্যের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। সরকার যদি আরেকটু সহযোগিতা করে, বিশেষ করে সহজ শর্তে ঋণ ও পৃষ্ঠপোষকতা দিলে এই শিল্প অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’

বিষয়টি নিয়ে পটুয়াখালী বিসিকের উপ-সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আল-আমিন জানান, ‘আমরা মৃৎশিল্পীদের প্রশিক্ষণ ও স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করছি। করোনাকালে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পণ্যের নতুন নতুন ডিজাইন তৈরিতে সহায়তা করছি এবং এই শিল্পকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ চলছে।’

বৈশাখের উৎসব যেন বাউফলের মৃৎশিল্পীদের জীবনে এনে দেয় নতুন প্রেরণা ও সম্ভাবনার দ্বার—এই প্রত্যাশায় দিন গুনছেন তাঁরা।