কষ্ট, সংকট এবং অসীম পরিশ্রমের এক অনন্য গল্প ফারজানা আক্তার তামান্নার। পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রামে জন্ম নেওয়া ফারজানা, ছোটবেলায় যে স্বপ্ন দেখেছিলেন ডাক্তার হওয়ার, তা বাস্তবে রূপ দিতে শুরু করেছিলেন কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। শেষ পর্যন্ত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও, তার স্বপ্ন পূরণের পথে এসে দাঁড়িয়েছে আর্থিক সংকটের বড় বাধা।

ফারজানার বাড়ি গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের বড় গাবুয়া গ্রামে। তার পিতা মো. আলাউদ্দিন, একজন দরিদ্র ব্যক্তি, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করতে পারায় দুই বছর ধরে ঢাকায় চলে গেছেন। তার মা সেলিনা বেগম, একজন গৃহিণী। সত্ত্বেও, তাদের সংগ্রাম এবং স্বপ্ন ছিল একটাই—মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া।

ফারজানা তার কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একাধিক পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছেন। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৪৭২৮ তম মেধাক্রম নিয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। তবে, দরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে এই সুযোগও অদৃষ্টের মতো ধরা দিয়েছে, কিন্তু অর্থের অভাবে তার স্বপ্ন এখন এক বড় প্রশ্ন চিহ্নের মুখে।

ফারজানা ২০১৫ সালে হরিদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি তে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে গলাচিপা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে জেএসসি এবং ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ অর্জন করেন। এরপর তিনি বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হন এবং ২০২৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ৪.৯২ GPA পেয়ে উত্তীর্ণ হন। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় তার মেধা তালিকা ৭৮ নম্বর এবং মেরিট স্কোর ১৭৪.২।

গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পায় না, তবে ফারজানার আত্মবিশ্বাস এবং কঠোর পরিশ্রম তাকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, তার আর্থিক দুরবস্থা তাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তিনি জানান, ‘‘আমার এই সফলতা এত সহজ ছিল না। অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে—টাকার অভাব, মানুষের কথা, সব কিছু। কিন্তু আজ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য দরকার অর্থ, যেটা আমাদের নেই।’’

ফারজানার মা সেলিনা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘‘আমরা খুব গরীব। দুই মেয়েকে লেখাপড়া করাতে গিয়ে অনেক ঋণ নিতে হয়েছে। এখন ফারজানার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যেতে পারে, যদি সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে না আসেন।’’

ফারজানার দৃঢ় বিশ্বাস, একদিন তিনি গ্রামে ফিরে আসবেন এবং অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা দেবেন। তবে, এখনই তার স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রয়োজন সমাজের সাহায্য ও সহযোগিতা।

ফারজানার সাথে যোগাযোগের জন্য তার মুঠোফোন নম্বর: ০১৬০৫৮৬৩৫৯১