শেখ হাসিনা তার গোপন কারাগারে আটকে রাখতেন শিশুদেরও। এমনকি তাদের পান করতে দেওয়া হতো না মায়ের দুধ। জিজ্ঞাসাবাদের সময় মা-বাবার ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করা হতো এসব শিশুদের।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় বাবাকে চাপ দেয়ার জন্য ‘মানসিক নির্যাতনের অংশ হিসেবে’ শিশুটিকে মায়ের দুধ খাওয়ানো থেকে দূরে রাখা হয়েছিল।
ভয়ংকর এ অপরাধের তথ্য প্রকাশ করেছে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমটি।
সম্প্রতি শেখ হাসিনার আমলে গুমের তদন্তকারী একটি কমিশনের এক তদন্তে সামনে এসেছে ভয়াবহ এই তথ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গোপন কারাগারে বন্দি শত শত লোকের মধ্যে কয়েকটি শিশুও ছিল বলে জানিয়েছে বর্তমানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে গুমের তদন্তকারী একটি কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তত অর্ধডজন (ছয়জন) শিশু তাদের মায়েদের সঙ্গে মাসের পর মাস কারাগারে বন্দি ছিল। আটক মা-বাবাদের মানসিক চাপ দেওয়ার জন্য শিশুদের ব্যবহার করা হতো; যার মধ্যে শিশুদের দুধ পান করতে না দেয়ার মতো ভয়াবহ ঘটনাও রয়েছে।
তদন্ত কমিশন বলেছে, নারীদের সন্তানসহ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কয়েকটি ঘটনার বিশদ বিবরণ তাদের কাছে রয়েছে। যার মধ্যে সর্বশেষ এই ধরনের ঘটনা ঘটে ২০২৩ সালে। এছাড়া কমিশন এই বিষয়ে এক গর্ভবতী নারীর ঘটনাও উল্লেখ করেছে। গর্ভবতী ওই নারীকে তার দুটি ছোট শিশুসহ আটকে রাখা হয়েছিল এবং সেই আটক কেন্দ্রে তাকে মারধরও করা হয়েছিল।
কমিশন বলেছে, একজন প্রত্যক্ষদর্শী তদন্তকারীদের গোপন কারাগারের এমন একটি কক্ষ দেখিয়েছেন যেখানে তাকে শিশুকালে তার মায়ের সঙ্গে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। আর এই আটক কেন্দ্রটি পরিচালনা করত আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
কমিশনের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘তার মা আর কখনোই ফিরে আসেননি।’
অন্য একটি ঘটনায়, এক দম্পতি এবং তাদের শিশুকে আটক করা হয়েছিল এবং জিজ্ঞাসাবাদের সময় বাবাকে চাপ দেয়ার জন্য ‘মানসিক নির্যাতনের অংশ হিসেবে’ শিশুটিকে মায়ের দুধ খাওয়ানো থেকে দূরে রাখা হয়েছিল।
কমিটির সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কিছু ভুক্তভোগী তাদের নির্যাতনকারী কর্মকর্তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে না পারলেও তাদের জবানবন্দির মাধ্যমে সেই সব বাহিনীকে চিহ্নিত করা যাবে।
সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘এই ধরনের ক্ষেত্রে, আমরা কমান্ডারকে জবাবদিহি করার সুপারিশ করব। ভুক্তভোগীদের পরিবারের ওপর এসব ঘটনায় বহুমুখী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে, আর সেটি গুরুতর মানসিক আঘাত থেকে শুরু করে আইনি এবং আর্থিক চ্যালেঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত।’
মন্তব্য করুন