কলাপাড়ায় বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জন সুরক্ষা ফোরাম এবং কলাপাড়া পরিবেশ ও জন সুরক্ষা মঞ্চের আয়োজনে প্রান্তজনের সহযোগিতায় মেগাপ্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, যথাযথ পুনর্বাসন, বিকল্প কর্মসংস্থান ও কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা নিরসন-প্রতিকারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার দুপুরে কলাপাড়া প্রেসক্লাবের ইঞ্জি: মো: তৌহিদুর রহমান (সি আই পি) মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের সদস্য অধ্যাপক গাজী জাহিদ হোসেন, সদস্য পুষ্প চক্রবর্তী, কলাপাড়া পরিবেশ ও জনসুরক্ষা মঞ্চের সদস্য সচিব মনোয়ারা বেগম, কলাপাড়া প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক মো: হুমায়ূন কবির, সাংবাদিক শামসুল আলম, এস এম মোশারফ হোসেন মিন্টু, মেজবাহ উদ্দিন মাননু, অমল মুখার্জি, নেছারউদ্দিন আহমেদ টিপু, রাসেল কবির মুরাদ, জসীম পারভেজ, মোস্তাফিজুর রহমান সুজন মৃধা, রাসেল মোল্লা, সগীর হোসেনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের সমন্বয়কারী শুভংকর চক্রবর্তী সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্য পাঠ করে বলেন, বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলায় বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত কলাপাড়া। সাগর তীরবর্তী দক্ষিণের জনপদ পর্যটন সমৃদ্ধ কলাপাড়ায় অবস্থিত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদী ভাঙন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, সমুদ্র উপকূলে লবণাক্ত পানি প্রবেশ পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ফলে কলাপাড়ায় বাস্তচ্যুত পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কলাপাড়ার অন্তর্ভুক্ত টিয়াখালী, ধানখালী, লালুয়া এবং চম্পাপুর ইউনিয়নে বর্তমানে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং কিছু প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলমান আছে।

এসব প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পায়রা সমুদ্র বন্দর, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (আরএনপিএল), পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট সুপারথার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র (আশুগঞ্জ) বানৌজা শেরেবাংলা নৌঘাঁটিসহ অন্যান্য প্রকল্প। এ প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পায়রা সমুদ্র বন্দরের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৬.৫৬২.২৭ একর জমি। ধানখালী ইউনিয়ন থেকে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ৯৮২,৭৭ একর, পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (আরএনপিএল) কেন্দ্রের জন্য ৯১৫.৭৪ একর এবং ধানখালী ও চম্পাপুর ইউনিয়ন থেকে পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট সুপারবার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র (আশুগঞ্জ) নির্মাণের জন্য ৯২৫.৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বানৌজা শেরেবাংলা নৌঘাঁটি নির্মাণের জন্য লালুয়া ইউনিয়নের প্রথম পর্যায়ে ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী আরও ৬২০ একর জমির অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান। উল্লেখিত মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য সর্বোমোট ১০,২০৬.২৮ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে। জমি অধিগ্রহণের আগে বলা হয়েছিল জমির ন্যায্যমূল্য দেয়া হবে, ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি মানুষকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে, ঘর-বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে, কলাপাড়ার কেউ বেকার থাকবে না, সবাইকে প্রকল্পে কাজ দেয়া হবে, বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। প্রতিশ্রুতির কিছু কিছু বাস্তবায়ন হলেও, অধিকাংশ প্রতিশ্রুতির বাস্তবরূপ এখনো দেখা যাচ্ছেনা। কলাপাড়ার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ আজ মানবেতরভাবে কোন রকমে বেঁচে আছে। দালালের সহায়তায় প্রকৃত জমির মালিকের বিরুদ্ধে ঠুকে দেওয়া হয় মামলা। অনেক জমির মালিকের ক্ষতিপূরণের টাকা আটকে গেছে এমন ভুয়া মামলায়। এতে মিলছেনা ক্ষতিপূরণ, ঠাঁই হচ্ছে না পুনর্বাসন কেন্দ্রে আশ্রয়ের ব্যবস্থা না করেই উচ্ছেদ করা হয়েছে বহু পরিবারকে। আবার অনেককে পুনর্বাসন করা হলেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কৃষক ও জেলে পরিবার হঠাৎ হারিয়েছে মাছ ধরার জলাশয় এবং কৃষিজমি। তাঁরা এখন বেকার। কলাপাড়ায় মেগা প্রকল্পের কারণে ইলিশ প্রজননসহ প্রাণ-প্রকৃতিরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রাখাইনদের ২৩৯ বছরের পুরোনো ছয়ানীপাড়া পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়েছে। এর আগেও জনগণের ন্যায্য দাবীগুলো আমরা নানানভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরে জানানোর চেষ্টা করেছি।

সংবাদ সম্মেলনে শুভংকর চক্রবর্তী আরো জানান, কলাপাড়ায় মেগা প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, যথাযথ পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা, কলাপাড়ায় মেগা প্রকল্পে যেসকল খাল বা জলাশয় ভরাট হয়েছে সেগুলো পুনরুদ্ধার, কলাপাড়ার পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি করে না এমন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, কলাপাড়ায় সকল জ্বীবাশ্ম জ্বালানী ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল করে নাবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদুৎ কেন্দ্র স্থাপন, আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল হওয়ায় সেখানের অধিগ্রহনকৃত তিন ফসলি জমি কৃষকদের মাঝে ফিরিয়ে দেওয়া, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমীক্ষা পরিচালনা করে ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করা।