
বঙ্গোপসাগর সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাব কেটে গেছে গত রোববার সন্ধ্যায়। আবহাওয়া অনুকূলে আসার সাথে সাথেই গভীর সমুদ্রগামী পেশাজীবি জেলেরা জাল ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি নিয়ে ছুটছেন ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছের শিকারের উদ্দেশ্যে। সোমবার থেকেই পটুয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের আকাশ রৌদ্রজ্জ্বল রয়েছে।
গত শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) থেকে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত টানা ১০ দিন মৌসুমী বায়ু ও নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল থাকায় উপকূলের অধিকাংশ জেলেরাই নিরাপদ আশ্রয়ে ঘাটে বসে অলস সময় পার করেছে। অপরদিকে সমুদ্রোপকূলবর্তী খুটা জেলেদের মাছ শিকার করতে দেখা গেছে। এদিকে সমুদ্রে নিম্নচাপের মধ্যেও কিছু ট্রলার সমুদ্রে মাছ শিকাররত ছিল বলে সূত্র জানিয়েছে। এদের মধ্যে অনেক ট্রলার সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সরেজমিন সোমবার রাত থেকেই কিছু সংখ্যক গভীর সমুদ্রগামী জেলেদের মাছ শিকারে নামতে দেখা গেছে। নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল সমুদ্রে জেলেদের ক্ষতিগ্রস্ত শত শত ট্রলার মেরামতের পর সোমবার ও মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারের সন্ধানে যেতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে মহিপুর-আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের চিত্র ছিল একটু ভিন্ন। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেটিতে আজও অবস্থান করছে অনেক ট্রলার। এসব ট্রলারে জ্বালানি তেল, বরফ, জাল ও খাদ্যসামগ্রী তোলা হচ্ছে। তারা আশা করছেন সমুদ্র থেকে কাঙ্খিত ইলিশসহ অন্যান্য মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরবেন।
জানা গেছে, এ বছর জেলেরা সরকারের আরোপিত ৬৫ দিনের মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা ও কয়েক দফায় বৈরী আবহাওয়ার কারণে আশানুরূপ ইলিশ শিকার করতে পারেনি। মৌসুমী বায়ু ও লঘুচাপের প্রভাবে আবহাওয়া খারাপ হয়ে নিম্নচাপে রূপ নিলে তীরে ফিরতে বাধ্য হয় জেলেরা। এর আগে গত ২৩ জুলাই মধ্যরাতে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ২৪ জুলাই থেকে মাছ শিকারে নামে উপকূলের হাজারও জেলে। তবে ভরা মৌসুমেও কাঙ্খিত ইলিশের দেখা না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন তারা। উপকূলের জেলেরা বুক ভরা আশা নিয়ে গভীর সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছে। আশানুরূপ মাছ পেলে ট্রলারগুলো আগামী তিন চার দিনের মধ্যে ঘাটে ফিরে আসবে। তবে সমুদ্রে মাছ কম থাকলে ট্রলারগুলো ৮ থেকে ১০ দিন সমুদ্রে ফ্রেসিং করবে বলে জানান জেলেরা।
মৎস্যবন্দর আলীপুরের এফবি তামান্না ট্রলারের মাঝি ইউনুস মাতুব্বর বলেন, ‘টানা ১০ দিন ঘাটে বসে অলস সময় পার করেছি। আজকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সমুদ্রে যাচ্ছি। আশা করছি আমাদের জালে প্রচুর ইলিশ মাছসহ অন্যান্য মাছ ধরা পড়বে। আমাদের সংসারে ফিরবে সুদিন।’
অপর একজন মাঝি একলাস গাজী বলেন, ‘৬৫ দিনের অবরোধের পর মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল ছিলো। এরপর আবার লঘুচাপের প্রভাবে সাগরে নিম্নচাপ ছিলো। যার কারণে ঘাটে বসে অলস সময় পার করতে হয়েছে। গতকাল থেকে আবহাওয়া মোটামুটি ভালো। তাই সমুদ্রে যাচ্ছি। আশা করছি জালে কাঙ্খিত ইলিশ মাছ ধরা পড়বে।’
ট্রলার মালিক শাখাওয়াত ফকির বলেন, ‘পুরো মৌসুমে কাঙ্খিত ইলিশ মাছ শিকার করতে পারিনি। সামনে আশ্বিন মাসের ২২ দিনের অবরোধ। এখন ইলিশ মাছ ধরা পড়লে লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবো। তা না হলে পুরো মৌসুমী লোকসানের ঘানি টানতে হবে। আশা করছি অবরোধের আগ পর্যন্ত ভালো ইলিশ মাছ শিকার করতে পারবো।’
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা বন্দরে অবস্থান করছিলো। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফের তারা সমুদ্রে যাচ্ছে। আশা করছি তারা কাঙ্খিত মাছ শিকার করে ঘাটে ফিরবে। লোকসান কাটিয়ে তাদের সুদিনের প্রত্যাশা কামনা এই কর্মকর্তার।’
মন্তব্য করুন