
দেশে চলমান পরিস্থিতিতে সকল সরকারি প্রাথমিক ,সরকারি বেসরকারি মাধ্যমিক, মাদ্রাসা,কারিগরি এবং বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বন্ধ রয়েছে। তারই মধ্যে সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার ২৭নং মধ্য আমড়াগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক সপ্তাহ ধরে শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন প্রধান শিক্ষক। তিনি বাংলাদেশ প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি মির্জাগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ম্যানেজ করে ২০০৫ সাল থেকে ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে আছেন বলে সূত্রে জানা যায়।
প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী আসমা আক্তারও ওই বিদ্যালয়ে দুই বছর যাবৎ সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তাই নিজ ক্ষমতা বলে এহেন কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন প্রধান শিক্ষক। তার ভয়ে কোন সহকারী শিক্ষক কথা বলতেও পারেন না।শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় সরকারি নির্দেশনা রয়েছে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখার। অথচ সরকারের নির্দেশনা কে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে বারোটায় উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের মধ্যে আমড়াগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যেক ক্লাশে ৮-১০ শিক্ষার্থী ক্লাশে বসে আছেন। এ সময় শ্রেণিকক্ষে সহকারী শিক্ষকরা পাঠদান করছেন। বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস নেয়া হচ্ছিলো। তবে বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে পাওয়া যায়নি। এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে প্রধান শিক্ষক ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আসেন না। ইচ্ছে মতো বিদ্যালয়ে আসেন-যান। তার পরিবর্তে বিদ্যালয় পরিচালনা করেন তার স্ত্রী মোসাঃ আসমা। অভিভাবকদের দাবি, বেশ কয়েক দিন ধরে বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা উপস্থিত হয়ে ক্লাশ করাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষার্থীরা অনেকে জানান, গত ৭ দিন ধরে স্কুলে ক্লাস হচ্ছে। স্যার ও ম্যাডাম আসলেও ঠিকমত ক্লাস করাচ্ছেন।
সহকারী শিক্ষক মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপস্থিত হবার নির্দেশনা রয়েছে। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ মোতাবেক ক্লাস চালানো হচ্ছে। তাই এক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত ক্লাস নেয়া হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোশাররফ হোসেনের মুঠোফোনে বারবার ফোন (০১১৭১১৩০৭১৬৩) করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
উপজেলার উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রিয়াজুর হক বলেন, সরকারি নিদর্শনা রয়েছে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ। কিন্তু শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকবেন। সরকারি নিদের্শ উপেক্ষা করে তারপরও প্রধান শিক্ষক কি ভাবে বিদ্যালয় চালাচ্ছেন তা জানি না। ঘটনাটি শুনে সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য বিদ্যালয়ে এটিওকে পাঠানো হয়েছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বিভিন্ন সহকারী ও প্রধান শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সরকারের নির্দেশনা রয়েছে সকাল ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অফিস খোলা থাকবে ও শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক অবস্থান করতে হচ্ছে। অপরদিকে বিভিন্ন মিডিয়াতে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য শোনা যাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই কিভাবে প্রধান শিক্ষক ক্লাস পরিচালনা করছেন তা আমরা জানি না।
পটুয়াখালী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বক্তিয়ার রহমান বলেন, মির্জাগঞ্জে কোনো সরকারি বিদ্যালয়ে পাঠদান পরিচালিত হচ্ছে এমন তথ্য আমার জানা নেই। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো। কেউ যদি অতি উৎসাহী হয়ে পাঠদান করায় সেটা তাদের দায়ভার।আগামী রোববার(৪আগস্ট) থেকে পাঠদান শুরুর নির্দেশনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করুন