
পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পঁচাকোড়ালিয়া গ্রামে ‘পটুয়াখালী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা’য় কাজের শুরুতেই বাঁধা দিয়েছেন স্থানীয়রা। ইপিজেড কর্তৃপক্ষ মাটির কাটার উদ্দেশ্যে মেশিন দিয়ে কাজ শুরু করতে গেলে জমির মালিকরা তাদের ক্ষতিপূরনের টাকার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দেন, এতে বাঁধাগ্রস্থ হয় কার্যক্রম।
শনিবার (জুলাই ১৩) বিকাল ৫ টার দিকে ইপিজেড এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে শতাধিক স্থানীয় লোক তাদের জমির ক্ষতিপূরনের টাকার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। এদের মধ্যে থেকে বেল্লাল শরীফ জানান, তার ৩ একর ২৬ শতাংশ জমি ইপিজেড প্রকল্পের জন্য জেলা প্রশাসন অধিগ্রহন করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরনের টাকা পাননি। টাকা না পাওয়া পর্যন্ত তারা এখানে কোন কাজ করতে দেবেন না।
মাওলানা নুরুল ইসলাম জানান, বসতবাড়ি ছাড়া ৩ একর কৃষি জমির সবটুকুই অধিগ্রহন করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের টাকা না দিয়েই কর্তৃপক্ষ এখানে কাজ শুরু করেছে। আমাদের দাবি কাজের আগে আমাদের টাকা পরিশোধ করতে হবে।
বাসিন্দা মোঃ শফিকুল ইসলাম ভাষানী বলেন, তার ১২ একর জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য তিনি জেলা প্রশাসকের অফিসে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু টাকা দিতে তারা গড়িমসি করছে এবং নানা অজুহাতে টাকা দিতে অহেতুক দেরি করছে।আমরা অবিলম্বে জমির ক্ষতিপূরনের টাকা চাই।
স্থাণীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো.হুমায়ুন কবির বলেন, ইপিজেড স্থাপনের জন্য এখানে ৪১০ একর জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। ১ হাজার ২শ জন লোক তাদের জমির ক্ষতিপূরনের টাকার জন্য জেলা প্রশাসকের অফিসে নিয়মানুযায়ী কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু টাকা দেয়া হচ্ছে না। এখানকার লোকজন জমিতে কোন ধরনের কাজ করার আগে তাদের টাকা দাবি করছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও জমির মালিকদের টাকা পরিশোধ করা উচিত।
ইপিজেড প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল বা বেপজা’ কর্তৃপক্ষ ৯ মাস আগে এই জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৬২ কোটি টাকা জেলা প্রশাসকের অনুকুলে হস্তান্তর করেছে। কিন্তু এখনও কেন জমির মালিকদের ক্ষতিপূরনের এ টাকা দেয়া হচ্ছে না তা বলতে পারছিনা। বিষয়টি নিয়ে আগামিকাল জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলবো।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলম জানান, জনবল সংকটের কারনে জমির ক্ষতিপূরনের টাকা দিতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে জনবল সংকট কেটে গেছে এবং খুব শীঘ্রই জমির মালিকদের টাকা পরিশোধে আমরা নিরলস কাজ করছি। স্থানীয়দের সাথে আলোচনা করে উদ্ভুত সমস্যার সমাধান করা হবে। আশা করছি আগামিকাল ওখানে কাজ শুরু হবে।
উল্লেখ্য, ৪১০ দশমিক ৭৮ একর জমির ওপর পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পঁচাকোড়ালিয়া গ্রামে হচ্ছে এই ইপিজেড। এ ছাড়াও, একই প্রকল্পের আওতায় কুয়াকাটায় ২ দশমিক ২৫ একর জমির ওপর স্থাপিত হচ্ছে ইনভেস্টরস ক্লাব।
প্রকল্পের আওতায় রাস্তা, ড্রেন নির্মাণের পাশাপাশি ৪টি ৬ তলা কারখানা ভবন, ৩টি ১০ তলা, ৪টি ৬ তলা আবাসিক ভবন, একটি ৬ তলা ও ২টি ৪ তলা অফিস ভবন এবং ২টি অন্যান্য ভবন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়াও, বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ১৪টি ১১/০.৪১৫ কেভি সাবস্টেশন, ১৫ কিলোমিটার ১১ কেভি এইচটি লাইন ও একটি ৩৩/১১ কেভি জিআইএস সাবস্টেশন নির্মাণ ও একটি হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে গৃহীত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। এর খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে বেপজার নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে প্রায় ৩৩৮ কোটি টাকা, বাকি ১ হাজার ১০৫ কোটি টাকার জোগান দেওয়া হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।’
আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এখানে প্রায় ১ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে এবং ওই এলাকার লোকজনদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে বলেও আশা করেন এই কর্মকর্তা।
২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে। প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ইপিজেড স্থাপনের মাধ্যমে বিনিয়োগ আহরণ, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’
মন্তব্য করুন