ঈদুল আজহার ছুটি শেষ হলেও শুক্রবার (২১ জুন) সাপ্তাহিক বন্ধ ঘিরে বাড়তি পর্যটকের সমাগম হয়েছে পটুয়াখালীর পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে। ঈদের ছুটির সাথে সাপ্তাহিক বন্ধ যোগ করে অনেকেই লম্বা ছুটি নিয়ে বেড়াতে এসেছেন। পরিবার-প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে বান্ধবীদের দলভূক্ত পর্যটকও ভ্রমনে এসেছে। শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী পর্যটকের পদচারনায় কুয়াকাটা সৈকতের মূল কেন্দ্রের তিন কিলোমিটার এলাকায় জুরে মুখর ছিল। ঈদের গত তিন দিনের তুলনায় দীর্ঘ ৩২ কিলোমিটার সৈকতসহ পার্শ্ববর্তী দর্শনীয় স্পট গুলোতেও দর্শনার্থীদের ছিল বেশ আনাগোনা।

আবাসিক ও খাবার হোটেলে কাঙ্খিত পর্যটকের দেখা মিললেও সৈকত কেন্দ্রিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মন্দার রেশ কাটেনি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন আশানুরূপ পর্যটক থাকলেও ভালো বেচা বিক্রি না হওয়ায় তারা হতাশ।

কুয়াকাটায় আগত পর্যটকের নিরাপত্তাদানে সড়কে প্রশাসনের ভূমিকা দেখা গেলেও সৈকত এলাকায় পোষাকধারী পুলিশের নেই কোনো তৎপরতা এমন অভিযোগ রয়েছে পর্যটকদের। পর্যটকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মানের একটি পর্যটন কেন্দ্রের যেমন সেবা পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল সেই তুলনায় পদে পদে অব্যবস্থাপনা বিছানো। বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা যদি গুরুত্ব না দেয় তবে কুয়াকাটা পর্যটনে বড় ধাক্কা লাগবে।

সূর্যোদয় সূর্যাস্তের বেলাভূমি সাগরকণ্যা খ্যাত কুয়াকাটা। দুই যুগের ব্যবধানে প্রায় দুই শতাধিকের বেশি আবাসিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট সহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও সৈকতের মানোন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি। প্রতিনিয়ত দেশি বিদেশি পর্যটকরা কুয়াকাটা সৈকতে নেমেই হতাশ হচ্ছেন সৈকত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দ্বায়সারা ভূমিকা দেখে। পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমনে ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাপনায়ও কোনো উন্নত হয়নি। যত্র তত্র ছাতা বেঞ্চির সাড়ি, অস্বাস্থকর পরিবেশে দোকানপাট যেন সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। এছাড়াও বর্তমানে সৈকতের মূল কেন্দ্রে জ্যিও ব্যাগের কারনে স্বাভাবিক লচাফেরাসহ গোসলে নেমে ভোগান্তি পোহাচ্ছে। পতিত হচ্ছে নানা দূর্ঘটনায়।

কুয়াকাটা সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমআরএসটিইউ) রাস্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোঃ আবু সালেহ জানান, কুয়াকাটা মূলত পর্যটক আসবে এর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। এখানে ট্যুরিস্টদের আসার জন্য সেনটম একটা কন্টিনিয়েন্ট ব্যবস্থা থাকতে হবে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যিই এখানে সে ব্যবস্থাপনা অপ্রতুল।

আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যে, গতকাল বরিশাল বিআরটিসি এসি বাসের কর্তৃপক্ষ সকল প্যাসেঞ্জারকে নন এসি লক্কর ঝক্কর মার্কা একটি বাসে তুলে দিয়েছেন। টুরিস্টদের এই যে অভিজ্ঞতা, একই বাসে অনেক বিদেশি পর্যটকও ছিল। এমন অভিজ্ঞতা খুবই দুঃখজনক বিষয়। এরকম অভিজ্ঞতা যাদের একবার হবে ফ্যামিলি নিয়ে, লাগেজ নিয়ে, অনেক জিনিসপত্র নিয়ে মানুষ যে কি পরিমান ভোগান্তিতে পড়েছে; এরকম অভিজ্ঞতা হলে মানুষ তো দ্বিতীয়বার কুয়াকাটা আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ থাকবেনা।

আমি জানিনা এখানের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কি করেন। এখানকার প্রশাসনিক লোকজন আছেন, ডিসি মহোদয় আছেন, উপজেলা প্রশাসন আছেন, এছাড়া বিভাগীয় পর্যায়ে কমিশনার মহোদয় আছেন। এসব দেখভালের দায়ীত্ব তাদের। কেন দেখছেন না আমি বুজতে পারছি না। সরকার নানান উদ্যোগ নিচ্ছেন পর্যটনকে প্রসারিত করার জন্য। এই ট্যুরিজমের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। মানুষের এই সাফারিং গুলো যদি কন্টিনিউ থাকে তাহলে তো মানুষ আর কুয়াকাটা ভ্রমণে আসবেনা। কুয়াকাটা একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র। এমন হলে কুয়াকাটা ট্যুরিজম এর ডেভেলপমেন্ট সেটা কিন্তু আর হবে না।

 

এছাড়া কুয়াকাটা আসার আগে দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। এছাড়াও অবকাঠামোগত অনেক অপর্যাপ্ততা রয়েছে। সমুদ্রে লোকজন গোসল করছে আমি কোন সিকিউরিটি পার্সনকে দেখিনি যারা এখানে ঘুরছে বা লোকজনকে সতর্ক করছে। টুরিস্ট পুলিশ বক্সের ভিতরে বসে দ্বায়সারা দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের উচিৎ সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে নির্ধারিত পোশাকে অবজার্ভ করা।

 

সুনলাম ম্যাজিস্ট্রেট আসছেন, একটা সাজ সাজ ভাব, লোকজন ওখানে দাঁড়িয়ে অনেককে এলার্ট করছেন যে ম্যাজিস্ট্রেট আসছেন। তো মেজিস্ট্রেট আসবেন, দেখতে আসবেন বা পর্যবেক্ষণ করতে আসবেন সেটি বলে আসবেন কেন বা বলতে হবে কেন? তাকে আকর্ষিক ভাবে আসতে হবে এসে অন দ্যা স্পট দেখতে হবে। সরকার খুবই চেষ্টা করছেন এই বিষয়গুলো ডেভেলপমেন্ট করার জন্য। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে যারা এসব বিষয় দেখভাল করবেন, তাদের যদি নজরদারি না থাকে তাহলে এটা শিল্প হিসেবে ডেভেলপ হবে না। হোটেল গুলোতে ভাড়া কেমন নিচ্ছে হোটেল গুলোর ম্যানেজমেন্ট কোন সমস্যা আছে কিনা, কোনো সিন্ডিকেট আছে কিনা তা দেখভাল করতে হবে।

 

অনেক টুরিস্ট আছে তাদের কাছ থেকে শুনেছি ছবি তুলতে গেলে অনেক হয়রানির শিকার হয়। ছবি তুলে আবার তাদেরকে পরবর্তীতে জোর করে ছবিগুলো নিতে বাধ্য করে। একটি ট্যুরিজম পয়েন্টের সবকিছু উম্মুক্ত থাকতে হবে। যারা এই বিজনেস করছে ছোটখাটো ব্যবসা করে রুটি রুজি করছে, এই ট্যুরিজম ডেপলপ হলে তাদের রুটি রুজির উপড়ে একটা প্রতিক্রিয়া আসবে। যদি জোর করে এমন কিছু করেন তাহলে তো পর্যটনের উপরে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সকালে কুয়াকাটা বিচে এসে একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, মোটরসাইকেল ড্রাইভাররা একেক জন একেক রকম মূল্য নিচ্ছেন সূর্যোদয় দেখতে যাওয়ার জন্য। আমার মনে হচ্ছে না যে এসব কেউ দেখভাল করছেন। স্থানীয় প্রশাসন আছেন যাদের দেখার দায়িত্ব এইসব। পর্যটকদের পার্শ্ববর্তী দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণের জন্য কোন ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা নেই। যে যেরকম পারে ঘুরতে যাচ্ছে। এতে অনেকেই বাজে অভিজ্ঞতার শিকার হচ্ছেন। এখানে সরকারি কোন একটা ব্যবস্থাপনা থাকতে পারতো। আপনি খোলা একটি জায়গায় পর্যটকদের ডাকবেন তারা আসবেন এটা আসলে কখনোই আশা করা যায় না। পৃথিবীতে অনেক সমুদ্র সৈকত আছে। কেন পর্যটক কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত আসবে? এখানে নতুন অ্যাট্রাকশন তৈরি করতে পারলেই পর্যটনের বিকাশ হবে।

কুয়াকাটা সৈকতে ব্যবস্থাপনায় কি ধরনের অব্যবস্থাপনা রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি কলাপাড়া উপজেলা সভাপতি, এমএ হানিফ সরদার জানান, প্রথমেই বলতে হবে সৈকতে মোটরসাইকেল ড্রাইভারদের অবাধ বিচরণের কথা। তাদের ভেতরে একটা বড় ধরনের অসঙ্গতি রয়েছে। এখানে প্রতিনিয়ত পর্যটকরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ বয়সী মানুষরা বেশি ঝুকির সম্মুখীন হন। আমরা প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করছি যে মোটরসাইকেলগুলো সৈকতের মূল পয়েন্টে পর্যটকদের অবাধ বিচরণের মধ্যে তারা ঢুকে পড়েন। আর এসব তদারকিতে প্রশাসনের যেন লুকোচুরি খেলা। আমি মনে করি যারা এখানে বিচ ম্যানেজমেন্ট রয়েছে তারা এসকল মোটরসাইকেল চালকদের একটি সুশৃংখল ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনার জন্য একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে। এছাড়াও সৈকতের ভাসমান দোকানীদের কাছ থেকে কোন জিনিসপত্র কিনতে গেলে অতিরিক্ত দাম রাখা হয় আর এ নিয়ে পর্যটক সহ স্থানীয়দের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়। আবার আবাসিক হোটেলের বিষয় বলতে গেলে দেখা গেছে পর্যটকদের বাড়তি চাপ শুরু হলেই হোটেল কক্ষের গলাকাটা ভাড়া বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। এর জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে নেই সঠিক কোনো তদারকি। দেখা গেছে পর্যটকরা নির্ধারিত একটি টাকা নিয়ে কুয়াকাটা ভ্রমণে এসে রুম ভাড়া দিয়ে ছবি তুলতে গেলে ধোকায় পড়ে খাবার খেতে পারেনা। এমন অনেক অব্যবস্থাপনা রয়েছে যা থেকে উত্তোরনের পথ বেড় করা না গেলে অচিরের পর্যটকে ভাটা পড়বে কুয়াকাটা।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে যে অভ্যন্তরীণ পরিবহন, মোটরসাইকেল, অটো ভাড়া, আবাসিক ও খাবার হোটেলে গলাকাটা দাম রাখার ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হলে বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির নির্দিষ্ট ভ্রাম্যমাণ আদালতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করার জন্য।