ঈদের দ্বিতীয় দিনে দর্শনার্থীদের আগমনে জমে উঠেছে পটুয়াখালীর পর্যটন নগরী কুয়াকাটা। দীর্ঘদিন পর প্রান ফিরে পেয়েছে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে হাজারো পর্যটকের সমাগম ঘটে। প্রকৃতির নয়ানাভিরাম অপরূপ দৃশ্য অবলোকনে সৈকতের বেলাভূমিতে আনন্দ উন্মাদনায় মেতেছেন নানা বয়সী মানুষ। কেউ সমুদ্র তটে আছড়ে পড়া ছোট বড় ঢেউয়ের মিতালীতে গা ভাসাচ্ছেন, কেউ আবার সৈকতের ছাতা বেঞ্চিতে বসে উপভোগ করছেন সুবিশাল সমুদ্র। অনেকে আবার ঘুরে বেড়াচ্ছেন দীর্ঘ ৩০ কিলোমিটার সৈকতের বিভিন্ন পর্যটন দর্শনীয় স্পট গুলোতে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে আগত পর্যটকের অধিকাংশ পার্শবর্তী জেলা থেকে এসেছে বলে জানা গেছে। অনেক পর্যটক সকাল সন্ধ্যার জন্য বেড়াতে এসেছে। কিছু সংখ্যক পর্যটক আরো কয়েকদিন থাকবেন বলে জানান। আগত পর্যটকদের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় মাঠে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশসহ উপজেলা প্রশাসন ও রোভার স্কাউটের সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

তবে হাজারো পর্যটকের আনাগোনা বাড়লেও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাড়েনি বেচা বিক্রি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর সৈকত এলাকায় অতি সামান্য পর্যটকের আগমন ঘটেছে। আর যেসব পর্যটক এসেছে তাদের অধিকাংশই কেনাকাটা করছেন না। কুয়াকাটার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর কিছু সংখ্যক আবাসিক হোটেলে ২৫ শতাংশ বুকিং থাকলেও তৃতীয় শ্রেনীর আবাসিক হোটেল গুলোতে তুলনামূলক বুকিং নেই। তবে আগামীকাল (১৯ জুন) থেকে বাড়তি পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। খাবার হোটেল ব্যবসীরা জানান, অন্যান্য ছুটির দিনের তুলনায় ঈদের দ্বিতীয় দিনে স্বাভাবিক পর্যটকেরও সমাগম ঘটেনি। এতে করে হতাশায় ভুগছেন তারা।

খাবার হোটেল গাজী রেস্তরার হুমায়ূন কবির জানান, কুয়াকাটায় সরকারি ছুটিতে যে পরিমান পর্যটক আসেন সেই পরিমান স্বাভাবিক পর্যটকের দেখা নেই ঈদের দ্বিতীয় দিনেও। এর আগের বছর গুলোতে এমন দিনে যে পরিমান পর্যটক এসেছে তা তুলনা করলে অর্ধেকও আসেনি এবার। চলমান বছরে একদিকে প্রচুর গরমের কারনে পর্যটক প্রায় শূন্যের কোঠায় ছিল, অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের ধাক্কায় আমরা এখন চরম বেকায়দার মধ্যে পড়ে গেছি। কোনো বেচা বিক্রি নেই। একদিকে যেমন হতাশা, তার মধ্যে বাড়ছে ঋনের বোঝা। এমন চলতে থাকলে কিভাবে টিকে থাকবো বিকল্প কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিনা।

কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল হানিমুন কটেজের পরিচালক মোঃ জামাল জানান, গত মাসের কর্মচারী বেতন এখনো দিতে পারিনি। আশা করেছিলাম ঈদ মৌসুমে বাড়তি পর্যটকের আগমন হলে কিছুটা লোকসান কেটে উঠবো। কিন্তু কাঙ্খিত পর্যটক আগমনের কোনো আভাস পাচ্ছি না। এছাড়া আগামী কয়েকদিনেও নেই অগ্রিম বুকিং।

কুয়াকাটা সৈকত কেন্দ্রিক আচার ব্যবসায়ী আল আমিন বলেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটক আসার সম্ভাবনায় দোকানে কয়েক লাখ টাকার মাল উঠিয়েছি। তবে সারাদিনে কোনো বিক্রিই হয়নি। এভাবেই চলছে গত কয়েকমাস ধরে।

সৈকতের ফটোগ্রাফার নেছার উদ্দিন জানান, আমরা মৌসুম ভিত্তিক আয়ের মাধ্যমে টিকে আছি। বছরের বিশেষ দিনগুলোকে কেন্দ্র করে মূলত ইনকামের একটা টার্গেট থাকে। তবে এবছর কেমন যেন কোনো বিশেষ দিনেই তেমন ভালো যাচ্ছেনা। প্রতিবছর ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকেই পর্যটকের সমাগম ঘটে। এবছর কিছু পর্যটক আসলেও কেউ ছবি তুলছেন না। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সারাদিন ঘুরেও এক কপি ছবি তুলতে পাড়েনি।

হোটেল মোটেল এমপ্লয়িজের সাধারন সম্পাদক জুয়েল ফরাজী জানান, আগামীকাল (১৯ জুন) থেকে আবাসিক হোটেলের ৫০ শতাংশ কক্ষ বুকিং রয়েছে। টানা কয়েকদিন ব্যপক পর্যটকের সমাগম থাকবে বলে জানান তিনি।

হোটেল মোটেল অনার্স এসোসিয়েশন সাধারণত সম্পাদক এম এ মোতালেব শরীফ জানান, আজ অনেক পর্যটক আসছে এবং ফোনেও রুম বুকিং হচ্ছে। আগামীকাল থেকে আরো পর্যটকের আগমন ঘটবে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিওনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, আগত পর্যটকরা নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দে যাতে কুয়াকাটা ভ্রমণ করতে পারে সে লক্ষ্যে সার্বক্ষনিক প্রস্তুত রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটকদের নিরাপত্তায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন সহ সাদা পোষাকের নজরদারিও রয়েছে।

সি বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, পর্যটকের নিরাপত্তায় আমরা উপজেলা প্রশাসন ও মহিপুর থানা পুলিশসহ কুয়াকাটা টুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক প্রস্তুত আছি।