
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় চাঁদাবাজির ভিডিও ফাঁসের পর এবার পটুয়াখালীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মাদক সেবন ও চাঁদাবাজির ভিডিওতে কুয়াকাটা পৌর ছাত্রলীগ নেতা রাইসুল ইসলাম শিবলু সহ একাধিক নেতার কর্মকান্ডের চিত্র উঠে আসলে টনক নড়ে সচেতন মহলের। এনিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানা আলোচনা সমালোচনা ঝড় ওঠে।
পরে গত ২ মে পটুয়াখালী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির একটি মামলা দায়ের করেছে আবাসিক হোটেল রনি’র ম্যানেজার মোঃ মনিরুল ইসলাম।
পৌর ছাত্রলীগ নেতা রাইসুল ইসলাম শিবলু (২৪)কে প্রধান আসামী করে অজ্ঞাত আরো ১৫ জনকে মামলার আসামী করা হয়েছে। তবে এ মাদক সেবন ও চাঁদাবাজির বিষয় সাজানো দাবী করে আসামীরা এর আগে গত ২৮ এপ্রিল কুয়াকাটা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা বলেন রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই উদ্দেশ্য প্রনীতভাবে এ মামলা করা হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানাগেছে, গত ২৩ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা রাইসুল ইসলাম শিবলু সহ ২০-২৫ জনের একটি গ্রুপ দেশীয় অস্ত্রে সশ্রে সজ্জিত হয়ে কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত আবাসিক হোটেল রনি’র ম্যানেজার মনিরুল ইসলামকে একটি কক্ষে জিম্মি করে ৬০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে এবং খুন জখম সহ বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ মারধর করা হয়। দীর্ঘ সময় দেনদরবার শেষে ২০ হাজার টাকা নিয়ে সটকে পরে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ঘটনার সাথে জরিত ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা মিমাংসার কথা বলে সময় ক্ষেপন করে এড়িয়ে যায়। যার কারনে মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে জানান তিনি ।
এদিকে গত ২৭ এপ্রিল উৎপল দাস নামের এক ফেইসবুক আইডি থেকে ওই চাঁদাবাজির ঘটনা সহ মাদক সেবনের একাধিক ভিডিও প্রকাশ করা হয়। ভিডিও প্রকাশের পর তা সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানা আলোচনা সমালোচনার শুরু হলে বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে পৌর ছাত্রলীগ নেতা রাইসুল ইসলাম শিবলু ও বাইজিদ কুয়াকাটা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে ভাইরাল হওয়া ভিডিও গুলো সুপার এডিট বলে দাবী করা হয়।
আবাসিক হোটেল রনির ম্যানেজার মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, এরা ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে হোটেলে এসে চাঁদা নিচ্ছে রিতিমতো। তারই ধারাবাহিকতায় চাঁদার জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসছিলো। তবে এবার চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ২৩ মার্চ সন্ধ্যায় মামলায় বর্নিত আসামীরাসহ একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ হোটেলের মধ্যে ঢুকে চেয়ার টেবিল ভাংচুরসহ আমাকে মারধর করে। এ সময় তারা ৬০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। চাঁদা না দিলে খুন জখমের হুমকী দেয়। আমি ভয়ে হোটেলের ক্যাশে রক্ষিত বিশ টাকা দিয়ে দেই। তখন হোটেলের সামনে অনেক লোকজন জড়ো হয়েছিল। এ ঘটনা অনেকেই প্রত্যক্ষ করেছেন।
এ বিষয় কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আঃ বারেক মোল্লা বলেন, কুয়াকাটায় ছাত্রলীগের কমিটি আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্ত কমিটিতে এদের কোন নাম নেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ছাত্রলীগের নাম দিয়ে দখলদারিত্ব, মাদক ও চাঁদাবাজি সহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তারা বর্তমান ছাত্রলীগের কমিটিতে শীর্ষস্থান পেতে দৌড়ঝাপ শুরু করলেও কমিটিতে আসার আগেই বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার যে চিত্র উঠে এসেছে যা সত্যি দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ছাত্রলীগের নামে কেউ যদি চাঁদাবাজি করে থাকে তার দায়দ্বায়িত্ব তাদেরই। কেউ অন্যায়ের সাথে জড়িত থাকলে তা প্রমান হলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে গতানুগতিক আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবস্থা নিবেন। কেউ অপরাধ করলে তার বিচার অবশ্যই হবে। এ বিষয়ে প্রশাসন যেন গুরুত্বের সাথে তদন্ত করেন। এবং অপরাধী যেই হউক না কেন তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাই।
মহিপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, ছাত্রলীগের নামে চাঁদাবাজির কোন মামলার বিষয় তার জানা নেই। আদালত থেকে কোন নির্দেশনা এলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
মন্তব্য করুন