
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গোলের গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে কলাপাড়াসহ উপকূলের কয়েকশো কৃষক পরিবার। প্রায় শত বছর ধরে এ গোল গাছের রস দিয়ে গুড় তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করছে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের দুই শতাধিক পরিবার। নোনা জলে জন্ম। অঙ্গ-প্রতঙ্গ সবই নোনা, ডগা কাটলেই বেড় হচ্ছে মিষ্টি রস। এ রস দিয়ে তৈরী হচ্ছে গুড়। আর এ কিন্তু বর্তমানে লোকসানের মুখে হতাশায় এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন অনেকে। তবে এ পেশাকে আরো সমৃদ্ধ করতে প্রতিবছর পতিত জমিতে হাজার হাজার চারা রোপন করছে বন বিভাগ।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, গোলের গুড় স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এ গুড় খেলে ডায়বেটিস বৃদ্ধি পায়না, মানব দেহের গুড়াকৃমি দমন থাকে। পানিবাহিত রোগীরাও খেতে পারে। উপকূলীয় এলাকার খালগুলো খনন করে জোয়ার ভাটার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করতে পারলে গোলগাছ ধ্বংস হবে না। নতুন বাগান সৃষ্টি করলে গোলের গুড়ের উৎপাদন আরো বাড়বে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন চাষিরা।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দেশের দক্ষিণাঞ্চল উপকূলীয় এলাকার জোয়ার-ভাটা প্রবাহমান পতিত জমিসহ ডোবা নালায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য গোলপাতার বাগান। বিশেষ করে পৌষ, মাঘ ও ফাল্গুন মাসে এ গোলগাছ থেকে রস সংগ্রহ করে চাষীরা। প্রতিদিন বিকালে গাছের ডগা কেটে মাটির হাড়ি পেতে রাখা হয়। পরের দিন সকালে হাড়ি থেকে রস সংগ্রহ করে উচ্চ তাপে তৈরী করা হয় গুড়। কোন ধরনের কেমিকেল ছাড়া গরম গুড় একটি পাত্রে রেখে ঘুটে তৈরী করা হয় উন্নতমানের গুড়। আর এ গুড় প্রতি কেজি বাজারে বিক্রি করা হয় ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে। তবে বনদস্যুরা দিনদিন বাগান করছে। সরকারী কোন প্রনোদনা না পাওয়ায় ক্ষোভ-হতাশায় অনেকেই পরিবর্তন করছেন এ পেশা।
নীলগঞ্জের গোলচাষী বিধান চন্দ্র মিস্ত্রী জানান, দিনকে দিন গোলের গুড়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে আমাদের গুড় বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হতো। এখন মোবাইলে বিভিন্ন এলাকা থেকে যোগাযোগ করে নিয়ে যায়। বর্তমানে ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রয় করছি।
আরেক চাষী নির্মল চন্দ্র মৃধা বলেন, আমাদের নিকট থেকে ২০০ টাকা দরে কিনে নিয়ে একটি গ্রুপ অনলাইনে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা দরে বিক্রয় করছে। কিন্তু ক্রেতারা সরাসরি আমাদের নিকট থেকে ক্রয় করলে ২০০ টাকায় পাবে।
চাষী দেবাশীষ জানায়, গোলের গুড়ের চাহিদা বাড়লেও দিন দিন বাগান কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরির্তনসহ নানা কারণে গাছ মরে যাচ্ছে। পানি প্রবাহ সচল রাখতে এলাকার খালের বাঁধগুলো কেটে উন্মুক্ত করলেই গোলগাছ বৃদ্ধি পাবে।
এবিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা কৃষি র্কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, কলাপাড়ায় ৬৫ হেক্টর জমিতে গোলগাছের বাগান রয়েছে। গোলগাছ থেকে দুৃই শতাধিক পরিবার রস আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার গুড় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গোলগাছের বাগান হারিয়ে যাচ্ছে। গোলগাছের বাগান বৃদ্ধির জন্য বনবিভাগ ও পানিউন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয়ে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।
পটুয়াখালী বিভাগীয় বন র্কর্মকর্তা (উপ-বন সংরক্ষক) মো. সফিকুল ইসলাম জানান, গোলগাছ হচ্ছে একটি অর্থকরী বনজ ফসল। আমরা ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে উপকূলের বিভিন্ন এলাকার পতিত জমিতে ৩০ হাজার গোলের চারা রোপন করেছি। চলতি বছরে আরও ২০ হাজার চারা রোপন করা হবে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের এই কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন